বলিউডে ‘কাস্টিং কাউচ’ ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই সিনেমা ও টেলিভিশন জগতের তরুণ অভিনেত্রীদের ওপর নানা প্রকার যৌন হয়রানি, অস্বস্তিকর আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা প্রকাশ পেয়ে থাকে। এবার সেই সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌনি রায়, যিনি সম্প্রতি নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি অপূর্বা মুখিজার সঞ্চালিত টক শো ‘স্পাইস ইট আপ’–এ অতিথি হয়ে মৌনি জানিয়েছেন, যদিও তিনি সরাসরি কাস্টিং কাউচের সম্মুখীন হননি, কিন্তু ২২ বছর বয়সে এক প্রযোজনা সংস্থার অফিসে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হন।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা
মৌনি বলেন, তার ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুর দিকে ঘটনাটি ঘটে। একদিন সিনেমা নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি প্রযোজনা সংস্থার অফিসে যান। আলোচনার মধ্যে আসে একটি দৃশ্যের কথা, যেখানে নায়িকা সুইমিং পুলে জ্ঞান হারায় এবং নায়ক তাকে তুলে মাউথ-টু-মাউথ রেসাসিটেশন (প্রাণরক্ষা) দেয়।
“সেদিন সেই ব্যক্তি হঠাৎ আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মুখের ওপর নিজের মুখ রেখে সেই দৃশ্যটি দেখানোর চেষ্টা করেছিল, যেন সত্যিই শ্বাস-প্রশ্বাস দিচ্ছেন,”—মৌনি বলেন।
তিনি আরও জানান, মুহূর্তটি এমন ছিল যে তিনি স্তব্ধ হয়ে যান। “আমি কাঁপতে শুরু করি এবং দ্রুত দৌড়ে অফিস থেকে বের হয়ে আসি। সেই ঘটনা আমাকে অনেকদিন ধরে পীড়া দিয়েছে,”—বলেন অভিনেত্রী।
টেলিভিশন থেকে বলিউডের পথচলা
মৌনি রায় টেলিভিশন জগত থেকেই নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি ‘কিউকি সাস ভি কভি বহু থি’, ‘দেব কে দেব মহাদেব’, ‘নাগিন’সহ জনপ্রিয় সিরিয়ালে অভিনয় করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর তিনি বলিউডে পদার্পণ করেন ‘গোল্ড’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এবং ‘ব্রহ্মাস্ত্র’–এর মতো বড় বাজেটের ছবিতেও নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন।
অভিনেত্রীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ডেভিড ধাওয়ান পরিচালিত রোমান্টিক কমেডি ছবি ‘হ্যায় জওয়ানি তো ইশক হোনা হ্যায়’–এ দেখা যাবে। তবে এই স্বীকারোক্তি আবারও বলিউডের গ্ল্যামারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কঠিন বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
বলিউডে যৌন হয়রানির চরম বাস্তবতা
মৌনির অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, গ্ল্যামারের দুনিয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও যৌন হয়রানি প্রতিনিয়ত ঘটে। বিশেষ করে নবীন অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে, যারা নিজের ক্যারিয়ার গড়ার পথে আস্থা হারাতে পারে এবং অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এমন ঘটনার প্রকাশ অভিনেত্রীর সাহসিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ের নয়, বরং চলচ্চিত্র ও বিনোদন শিল্পে সংস্কৃতি পরিবর্তনের দাবি তোলে।
সমাজে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান
সম্প্রতি বলিউডের বহু নারী অভিনেত্রী কাস্টিং কাউচ এবং যৌন হয়রানি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। মৌনি রায়ের মতো উচ্চ প্রোফাইল অভিনেত্রীরা মুখ খুললে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং শিল্পক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ গঠনে ভূমিকা রাখে।
মৌনি জানান, তিনি নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন যাতে অন্যান্য অভিনেত্রীও সতর্ক থাকেন এবং নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হন। একইসঙ্গে বলিউডের প্রযোজক ও সংস্থাগুলোকে যৌন হয়রানি বন্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বলিউডের গ্ল্যামার দুনিয়া ভাসে রঙিন আলো আর খ্যাতির আবরণে, কিন্তু সেই আড়ালে লুকিয়ে থাকে যৌন হয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো ভয়ংকর বাস্তবতা। মৌনি রায়ের সাহসী স্বীকারোক্তি এই চিত্রকে সামনে এনেছে। তাঁর অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, শুধু চাইলেই নয়—সামাজিক ও শিল্পক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য সচেতনতা, সমর্থন এবং শক্তিশালী নীতি থাকা প্রয়োজন।
মৌনি রায়ের মতো অভিনেত্রীরা যে সাহস দেখাচ্ছেন, তা নতুন প্রজন্মের জন্য উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে এবং বলিউডকে আরও নিরাপদ ও সমান সুযোগের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited