চলতি বছর মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমা ‘সাইয়ারা’ দিয়ে রাতারাতি আলোচনায় উঠে এসেছেন অভিনেত্রী অনীত পাড্ডা। আহান পাণ্ডের বিপরীতে তাঁর অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছে দর্শক ও সমালোচক—বাণিজ্যিকভাবেও ছবিটি সফল। কিন্তু এই আলো, ক্যামেরা আর প্রশংসার পেছনে ছিল দীর্ঘ সংগ্রাম, হতাশা আর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার মুহূর্তও।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অনীত খোলামেলা ভাবে জানিয়েছেন, কেমন কঠিন ছিল বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করা—বিশেষ করে একজন বহিরাগত হিসেবে।
ভুয়া ওয়েবসাইটের ফাঁদে ১৭ বছরের অনীত
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই অনীতের সামনে আসে বাস্তবতার কঠিন মুখ। অভিনয়ে সুযোগ পাওয়ার আশায় নানা জায়গায় অডিশনের খোঁজ করছিলেন তিনি। তখনই একাধিক ভুয়া ওয়েবসাইট তাঁর ফাঁদ পাততে শুরু করে।
“আমি ভাবতাম, হয়তো এ বার একটা সুযোগ পাবো,” বলেন অনীত। “কিন্তু পরে বুঝলাম, অডিশনের নাম করে অনেকেই শুধুই প্রতারণা করছে।”
কাজের আশায় তিনি প্রায় ৫০ থেকে ৭০টি প্রযোজনা সংস্থায় ইমেইল করেছিলেন। অথচ, কোনো জবাবই আসেনি।
তাঁর কথায়,
“প্রতিদিন সকালে ইনবক্স খুলতাম, হয়তো আজ কেউ উত্তর দিয়েছে—এই আশায়। কিন্তু কখনও পাইনি।”
স্বপ্নের শুরু স্কুলের মঞ্চে
অভিনয়ের প্রতি অনীতের ভালোবাসা শুরু আরও আগে, মাত্র ১০ বছর বয়সে। স্কুলের নাটকে প্রথম অভিনয় করেন, আর তখনই মনে হয়েছিল, এই পথেই হাঁটবেন তিনি।
কিন্তু সেই সময় তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষরাই ছিলেন অনীতের সবচেয়ে বড় বাধা।
বন্ধু ও পরিবারের অনেকেই বলেছিল, “অভিনয় কোনো পেশা নয়।”
অনীত বলেন,
“একসময় আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম, হয়তো আমি ভুল করছি। নিজেকে বলতাম—‘এইসব ভাবা মানে বোকামি।’ স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম।”
ফিরে আসা এক নতুন সাহসে
তবুও অনীত থামেননি। কিছু সময়ের বিরতির পর আবারও সাহস জুগিয়ে তিনি শুরু করেন অডিশনের খোঁজ। এবার ভুয়া সাইট নয়—নামী প্রযোজনা সংস্থাগুলোকেও নিজের বায়োডাটা ও অডিশন টেপ পাঠাতে শুরু করেন।
হাসতে হাসতে তিনি বলেন,
“বলিউডের প্রায় সব বড় প্রযোজনা সংস্থার কাছেই আমার একটা বাজে বায়োডাটা, স্ন্যাপচ্যাট ফিল্টার দেওয়া ছবি, আর একগাদা অডিশন টেপ আছে!”
এই সময়েই তিনি বুঝতে পারেন—প্রত্যাখ্যানই আসলে শেখার সবচেয়ে বড় শিক্ষক।
‘সাইয়ারা’ বদলে দেয় সবকিছু
সব ব্যর্থতা, অপেক্ষা আর হতাশার পর একদিন সুযোগ আসে—‘সাইয়ারা’।
অনীত বলেন,
“প্রথম দিন সেটে গিয়ে বুঝেছিলাম, এতদিনের কষ্ট সার্থক। একবার সুযোগ পেলেই নিজেকে প্রমাণ করা যায়।”
ছবিটি মুক্তির পর তাঁর অভিনয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় প্রশংসার ঢল। অনীত এখন বলিউডের নতুন প্রতিশ্রুতিশীল মুখ হিসেবে আলোচনায়।
“স্বপ্ন দেখো, যত বাধাই আসুক”
সাক্ষাৎকারের শেষে অনীত বলেন,
“আজ যখন মানুষ আমার কাজ নিয়ে কথা বলে, তখন মনে হয় সেই ৫০টা ইমেইল, সেই সব ভুয়া অডিশন, আর সেই অপেক্ষাগুলো—সবকিছুই দরকার ছিল। কারণ ওগুলোই আমাকে তৈরি করেছে।”
তিনি আরও বলেন,
“যে মেয়েটি একসময় নিজেকে বলত ‘আমি পারব না’, আজ সে নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমার শুধু একটা কথা—স্বপ্ন দেখো, কারণ বাধা যতই আসুক, সাফল্য একদিন দরজায় কড়া নাড়বেই।”
সংগ্রাম থেকে তারকা হয়ে ওঠা এক গল্প
অনীত পাড্ডার গল্প শুধু একজন অভিনেত্রীর নয়, বরং এমন এক তরুণীর যিনি বারবার হার মেনে ফিরেও উঠে দাঁড়িয়েছেন।
বলিউডে যেখানে প্রতিদিন শত শত স্বপ্ন ভেঙে যায়, সেখানে তাঁর এই সাফল্য মনে করিয়ে দেয়—ভুয়া ওয়েবসাইটের অন্ধকার পেরিয়ে, সত্যিকারের আলোতে পৌঁছানো যায় শুধুই দৃঢ়তা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে।
