টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী শুধু ছোট পর্দা ও ওয়েব সিরিজে নয়, বড় পর্দাতেও নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে আলাদা পরিচয় গড়েছেন। তবে কাজের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত জীবনও সবসময়ই মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে এসেছে। বিশেষ করে মা শতরূপা সান্যাল ও বাবা উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর বিচ্ছেদ নিয়ে নেটদুনিয়ায় বহুবার আলোচনা হয়েছে। এবার সেই বিষয়েই খোলাখুলি কথা বললেন অভিনেত্রী।
ছোটবেলায় অভিজ্ঞতার ছাপ
ঋতাভরীর বয়স মাত্র চার বছরের সময়েই আলাদা হয়ে যান তার বাবা-মা। সম্প্রতি ‘স্টে আপ উইথ শ্রী’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানান, “বাবা-মায়ের আলাদা হয়ে যাওয়া আমার ছোটবেলার বাস্তবতা ছিল। কিন্তু সেই সময়ও আমি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম।”
তিনি বলেন, “যখন দাদুর বাড়িতে থাকতে শুরু করলাম, কোনো অসুবিধা হয়নি। ছোটবেলা থেকেই সেই বাড়িতে ঘন ঘন যাতায়াত ছিল, তাই পরিবেশটা নতুন ছিল না। মাকে কখনও হাউমাউ করে কাঁদতে দেখিনি। তবে দুই ঘরের বাড়িতে কতটা লুকিয়ে কষ্ট পাওয়া যায়—যা শোনার ছিল, তা কানে এসেছে, যা বুকে লাগার, তা লেগেছে।”
ঋতাভরী আরও জানান, ছোটবেলায় একজন তাকে সহানুভূতির সুরে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘বাবার কথা মনে হয় না?’ উত্তরে ছোট্ট ঋতাভরী বলেছিলেন, “আমার মায়ের নামও শতরূপা সান্যাল, আমার বাবার নামও শতরূপা সান্যাল।”
ভ্রান্ত ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী
অনেকেই মনে করেছেন, ঋতাভরী এই বক্তব্য দিয়ে বাবাকে অস্বীকার করছেন। তবে তিনি এ ধারণা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “আমি কখনও আমার বাবাকে অস্বীকার করি নি। আমি মায়ের কষ্টকে অস্বীকার করতে পারি না। কেউ যদি মাকে কষ্ট দেয়, সেটি আমি মাথায় রাখতে পারব না।”
ঋতাভরীর এই মন্তব্য তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি পরিণত দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। অনুরাগীদের মতে, এই খোলামেলা মনোভাবই তাকে অন্যান্য সহকর্মীদের থেকে আলাদা করে।
অভিনয়ের পাশাপাশি মানসিক দৃঢ়তা
ঋতাভরীর জীবনের এই ছোটবেলার অভিজ্ঞতা তার মানসিক দৃঢ়তা ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়ক হয়েছে। পরিবারিক ভাঙনের মতো পরিস্থিতিতেও নিজের পরিচয় বজায় রাখা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়া তার জীবনের বড় শিক্ষা হিসেবে কাজ করেছে।
এছাড়া, তার খোলাখুলি বক্তব্য নতুন প্রজন্মের জন্যও একটি প্রেরণার উৎস। এটি দেখায় যে, ব্যক্তিগত কষ্টকে স্বীকার করে এগিয়ে চলার মানসিকতা একজনের ব্যক্তিত্ব ও কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রশংসার ঝড়
ঋতাভরীর এই স্বচ্ছ ও নিখাদ প্রকাশনায় অনুরাগীরা প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তাকে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, তার এই বাস্তবধর্মী এবং খোলামেলা দৃষ্টিভঙ্গি তাকে শুধু অভিনেত্রী হিসেবেই নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবেও আলাদা পরিচয় দিয়েছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, ঋতাভরীর জীবনের ছোটবেলা ও পরিবারের বিচ্ছেদ তার চরিত্র ও মানসিকতার ওপর গভীর প্রভাব রেখেছে। তবে সেই পরিস্থিতি তাকে ভেঙে দেয়নি, বরং একজন দৃঢ়, সংবেদনশীল ও পরিণত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে।
সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস
