নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত—চট্টগ্রামের মেয়ে হলেও শৈশব থেকেই বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ফলে দুর্গাপূজার সবটুকু উচ্ছ্বাস, আনন্দ ও আবেগ তিনি অনুভব করেছেন মূলত রাজধানীতেই। এবারের দুর্গোৎসব ও শৈশবের স্মৃতিচারণা নিয়ে কথা বললেন তিনি।
পরিবার ও নাচের দলের সঙ্গে উৎসব
পূজা সেনগুপ্ত বলেন, “আমার আসলে দুটো পরিবার। একটি রক্তের বন্ধনে গড়া পরিবার, অন্যটি আমার নাচের পরিবার—তুরঙ্গমীর সদস্যরা। প্রতিবছরই পূজার একটি দিন আমরা সবাই একসঙ্গে আনন্দ করি। বাকি দিনগুলোতে বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাই। পূজার উৎসব আমার কাছে মানেই সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া।”
এবারও তিনি ঢাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে বেড়িয়েছেন। বনানী পূজামণ্ডপ, জগন্নাথ হল, খামারবাড়ি থেকে শুরু করে উত্তরার মণ্ডপেও দেখা গেছে তাকে। বিশেষ করে দশমীর দিন বনানীতে গিয়ে উপভোগ করেছেন পূজার আবহ ও বিসর্জনের আনন্দ।
শৈশবের পূজার আনন্দ ভোলেন না
শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পূজা বলেন, “শৈশবে পূজার আনন্দটাই ভিন্ন ছিল। ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে একবার পূজা করেছি, সেটি এখনো মনে আছে। তখন সবকিছুই ছিল রঙিন আর নতুনের আবিষ্কারের মতো। এখন আনন্দটা অন্য রকম—পরিণত, তবে আবেগের দিক থেকে শৈশবের পূজা বেশি আনন্দের।”
মায়ের স্মৃতি আর উৎসবের আবেগ
দুর্গাপূজা মানেই পারিবারিক আবেগ। তবে পূজার জন্য তার মনে একরাশ শূন্যতাও কাজ করে। মাকে হারানোর পর থেকে পূজা আনন্দে খানিকটা ঘাটতি অনুভব করেন। তিনি বলেন, “মাকে ছাড়া পূজার আনন্দটা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। তবে জীবন চলমান, আমাদের চারপাশের মানুষদের জন্যই ভালো থাকা জরুরি। উৎসব তাই তাদের সঙ্গেই ভাগ করে নিতে হয়।”
উপহার ও সাজের আনন্দ
উৎসব মানেই উপহার—এই ধারণার সঙ্গে একাত্ম পূজা সেনগুপ্ত। এবারের পূজায় তিনি যেমন উপহার পেয়েছেন, তেমনি প্রিয়জনদেরও উপহার দিয়েছেন। ফ্যাশনের ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের কথাও জানালেন তিনি। “পূজায় আমি মসলিন, রাজশাহী সিল্ক, জামদানি আর সুতির শাড়ি পরতে ভালোবাসি। উৎসবের আবহে ঐতিহ্যের পোশাকই যেন আনন্দকে দ্বিগুণ করে তোলে।”
প্রতিমার শৈল্পিকতা টানে সবচেয়ে বেশি
দুর্গোৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ কী—এমন প্রশ্নে পূজা জানালেন, “আমার কাছে দুর্গা প্রতিমাই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। প্রতিমার শৈল্পিক দিক আমাকে ভীষণ টানে। শুধু শিল্প নয়, প্রতিমার ভেতরকার শক্তির যে প্রতীকী রূপ, সেটাই পূজার আসল প্রাণ।”
তিনি আরও বলেন, পূজায় প্রতিবারই জগন্নাথ হলসংলগ্ন মেলায় ঘুরে বেড়ানো তার কাছে আনন্দের অন্যতম অংশ। ভিড়ভাট্টা, আলো, গান—সবকিছু মিলিয়ে এক অপূর্ব আবহ তৈরি হয়, যা বারবার টানে তাকে।
উৎসব মানেই মিলনমেলা
শেষ কথা হিসেবে পূজা সেনগুপ্ত বললেন, “আমার কাছে দুর্গোৎসব মানে মিলনমেলা। যেখানে সবাই মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করে, কোলাহলের মধ্যেও শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। শৈশবের পূজার মতো নির্মল আনন্দ আর পাওয়া না গেলেও এই উৎসব আমাকে এখনো নতুন করে বাঁচার শক্তি জোগায়।”
