অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৬ এর সময় নির্ধারণ নিয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপপ্রবি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম।
রোববার বিকেলে বাংলা একাডেমির সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আগামী বইমেলার সময়সূচি নির্ধারণ, প্রস্তুতি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে অংশ নেন বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং প্রকাশনা খাতের শীর্ষ প্রতিনিধিরা।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২৬ সালের অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই মেলা শুরু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারি মাসই বইপ্রেমী ও প্রকাশনা শিল্পের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়, এবং এটি মেলার ঐতিহ্যের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
নির্বাচনের পর মেলার সম্ভাবনা
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পরামর্শ ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি বিবেচনায় ফেব্রুয়ারি মাসেই মেলা আয়োজনের প্রস্তাবকে বাস্তবসম্মত মনে করা হয়েছে। তবে মেলার চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণের পর।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন,
“অমর একুশে বইমেলা শুধু সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়, এটি আমাদের জাতিসত্তার প্রতীক। জাতীয় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া— তাই দুই আয়োজন যেন পরস্পরের ওপর প্রভাব না ফেলে, সে বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন,
“প্রকাশক সমাজ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে যথাসময়ে চূড়ান্ত সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।”
প্রকাশকদের প্রস্তাব
বাপপ্রবি প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সময় প্রয়োজন। নির্বাচনের কারণে যদি জানুয়ারিতে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ব্যস্ততা থাকে, তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বইমেলা আয়োজনই হবে সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ সিদ্ধান্ত।
এক বিবৃতিতে সমিতির নেতারা বলেন,
“অমর একুশে বইমেলা শুধু বই বিক্রির ক্ষেত্র নয়, এটি জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম বৃহত্তম উৎসব। তাই মেলার পরিবেশ, নিরাপত্তা ও পাঠক উপস্থিতি—সবকিছু বিবেচনা করে ফেব্রুয়ারিতেই মেলা আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছি।”
বৈঠকে প্রকাশকরা বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় স্টল বরাদ্দ প্রক্রিয়া, ই-বুক প্রকাশনা, ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা, এবং মেলায় পাঠক সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়েও বিভিন্ন প্রস্তাব দেন।
বাংলা একাডেমির প্রস্তুতি
বৈঠকে জানানো হয়, বাংলা একাডেমি ইতোমধ্যে মেলা আয়োজনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। মেলার নকশা, অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এবং অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা নিয়ে কাজ চলছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন,
“আমরা চাই ২০২৬ সালের বইমেলা আরও আধুনিক ও পাঠকবান্ধব হোক। বই বিক্রির পাশাপাশি সংস্কৃতি ও সাহিত্যের আদান-প্রদানের একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে মেলাকে সাজানো হবে।”
তিনি আরও জানান, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে যেন জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারিত হওয়ার পর দ্রুত মেলার তারিখ চূড়ান্ত করা যায়।
অমর একুশে বইমেলার ঐতিহ্য
প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা, যা বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি বইমেলা হিসেবে স্বীকৃত। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই মেলা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
তবে ২০২৬ সালের শুরুতে সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বইমেলার সময়সূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। এবারের বৈঠকে প্রকাশকদের পক্ষ থেকে নির্বাচনের পরই মেলা আয়োজনের পক্ষে মত দেওয়া হয়, যাতে নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির দিক থেকে আয়োজনটি নির্বিঘ্ন হয়।










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited