বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গঠনে বিনিয়োগই হবে টেকসই উন্নয়নের সবচেয়ে কার্যকর চাবিকাঠি— এমন মত প্রকাশ করেছেন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। তিনি বলেন, “আজকের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চার আলোকশিখা জ্বলবে। তাদের প্রতিভা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশই হবে উন্নত, মানবিক ও জ্ঞাননির্ভর সমাজের ভিত্তি।”
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি–প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সুলতান আহমেদ চৌধুরী ট্যালেন্ট নার্চার ফান্ড’ বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দেশজুড়ে নির্বাচিত ২০০ মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে সনদ ও সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা তাদের ভবিষ্যৎ গবেষণা কার্যক্রমে সাফল্য কামনা করেন।
‘এই বৃত্তি এক প্রজন্মে বিনিয়োগ’
ড. আবরার বলেন, “এই বৃত্তি কেবল পুরস্কার নয়— এটি এক প্রজন্মে বিনিয়োগ। তোমরা কেবল ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতীক নও, বরং বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যতের আশার প্রতীক। তোমাদের গবেষণা, উদ্ভাবন ও কৌতূহলী মন আগামী দিনের উন্নয়নযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে জ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ নিয়ে। কৃষি, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি ও জলবায়ু অভিযোজনের মতো খাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক নীতি গ্রহণ করে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে।
“বিজ্ঞানই আজ উন্নয়নের চালিকাশক্তি। যে জাতি গবেষণায় বিনিয়োগ করে, সেই জাতি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। তাই বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা ও উদ্ভাবনমুখী শিক্ষা-পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে,”—যোগ করেন তিনি।
বিজ্ঞান কেবল পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ নয়
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “বিজ্ঞান কেবল পরীক্ষাগারের বিষয় নয়; এটি সমাজ পরিবর্তনের শক্তি, মানবকল্যাণের পথ এবং নৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি।”
তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিভা বিকাশের জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পখাতের মধ্যে নিবিড় সংযোগ থাকবে। এই আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমেই সৃষ্টি হবে উদ্ভাবনের ইকোসিস্টেম, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
“আমাদের তরুণদের উৎসাহ দিতে হবে কৌতূহলী হতে, প্রশ্ন করতে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সাহসী হতে। কারণ বিজ্ঞানমনস্কতা মানে শুধু তথ্য জানা নয়, সত্য অনুসন্ধানের সাহস থাকা,” বলেন অধ্যাপক আবরার।
ড. সুলতান আহমেদ চৌধুরী : এক অনুপ্রেরণার প্রতীক
ড. আবরার তাঁর বক্তব্যে প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সুলতান আহমেদ চৌধুরীর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “তিনি চিকিৎসা-বিজ্ঞান ও শিক্ষাক্ষেত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর মানবিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও নিষ্ঠা তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য চিরন্তন অনুপ্রেরণা।”
তিনি আরও বলেন, “যে সমাজ তার বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষকদের সম্মান করে, সেই সমাজই টেকসই অগ্রগতি অর্জন করতে পারে। ড. চৌধুরীর নামে এই বৃত্তি তরুণ প্রজন্মকে সেই মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করবে।”
‘জ্ঞাননির্ভর বাংলাদেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক ড. জহুরুল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সুলতান আহমেদ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মিসেস জাকিয়া রউফ চৌধুরী।
বক্তারা বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। তরুণ প্রজন্মকে গবেষণামুখী করে তুলতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
ড. জহুরুল করিম বলেন, “বিজ্ঞান চর্চা শুধু পেশা নয়— এটি এক ধরনের জীবনদর্শন। আমরা চাই, তরুণরা নিজেদের মধ্যে সেই মানসিকতা গড়ে তুলুক, যাতে তারা ভবিষ্যতের উদ্ভাবক হিসেবে দেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিতে পারে।”
বিজ্ঞানেই টেকসই ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, “আজকের তরুণ গবেষকরাই আগামী দিনের বিজ্ঞানী, যারা বাংলাদেশকে জ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবিকতার আলোকিত পথে নিয়ে যাবে। বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গঠনে বিনিয়োগই আমাদের টেকসই উন্নয়নের মূল কৌশল।”
তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের প্রতিটি আবিষ্কার, প্রতিটি গবেষণা দেশের অগ্রগতির ইট। তোমরাই বাংলাদেশের গর্ব, তোমরাই ভবিষ্যতের আলো।”










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited