বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি অবশেষে পূরণ হলো। সরকার তাদের বাড়ি ভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
চিঠিতে জানানো হয়, সরকারের বিদ্যমান বাজেট সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় দুই ধাপে এই ভাতা বৃদ্ধি কার্যকর হবে। প্রথম ধাপে আগামী ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৭.৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২,০০০ টাকা) প্রদান করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে আরও ৭.৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। ফলে তখন মোট ১৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন ২,০০০ টাকা) হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রাপ্ত হবেন তারা।
অর্থ বিভাগের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো বকেয়া ভাতা দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে এই ভাতার ব্যয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন। একইসঙ্গে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করে তার চারটি কপি অর্থ বিভাগে পৃষ্ঠাংকনের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এমপিওভুক্ত ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’, এবং ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি ডিপ্লোমা ও মৎস্য ডিপ্লোমা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’ অনুসরণপূর্বক নিয়োগের শর্তাদি অবশ্যই পালন করতে হবে।
এছাড়া, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ বেতনস্কেলে এই অতিরিক্ত সুবিধা সমন্বয় করতে হবে বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে, ২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর অর্থ বিভাগের প্রবিধি-৩ শাখা থেকে জারি করা ২৬০ নম্বর স্মারকটি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে।
‘এটি শিক্ষা বিভাগের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত’
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবি পূরণে আজকের এই মুহূর্তটি শিক্ষা বিভাগের জন্য ঐতিহাসিক। শিক্ষক সমাজের প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।”
তিনি আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথ সহজ ছিল না। নানা মতভেদ, বিতর্ক ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় দায়িত্বশীলভাবে একটি ন্যায্য ও টেকসই সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছে। এটি কেবল একটি আর্থিক সিদ্ধান্ত নয়—বরং শিক্ষকদের মর্যাদা ও প্রণোদনার স্বীকৃতি।”
ড. আবরার আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “গুণগত শিক্ষার বিস্তার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নের মধ্য দিয়েই আমরা বাংলাদেশকে আরও মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানে নিয়ে যেতে পারব।”
শিক্ষক সমাজে স্বস্তি ও প্রত্যাশা
এই সিদ্ধান্তে শিক্ষক সমাজে স্বস্তির বাতাস বইছে। অনেক শিক্ষকই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান’ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে এই বৃদ্ধি তাদের জীবনের বাস্তব চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
বেসরকারি শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, “আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে এই বাড়তি ভাতা যেন নিয়মিতভাবে প্রদান করা হয় এবং ভবিষ্যৎ বেতন কাঠামোতেও যেন শিক্ষক সমাজের ন্যায্য দাবি বিবেচনা করা হয়—এমন প্রত্যাশা রাখছি।”
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক প্রণোদনা বৃদ্ধি শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ শিক্ষক যখন ন্যায্য মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা পান, তখন তার পেশাগত মনোযোগ ও নিষ্ঠা বহুগুণে বেড়ে যায়।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এক স্বস্তির বার্তা। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকার আরও দৃঢ় হলো। এখন দেখার বিষয়, ঘোষিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর এটি কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে শিক্ষার গুণগত মানে—সেই প্রত্যাশাই এখন শিক্ষক সমাজের।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited