দেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আজ শিক্ষা ভবন অভিমুখে ‘ভুখা মিছিল’ কর্মসূচি পালন করবেন। প্রতীকী এই মিছিলে অংশ নেবেন হাজারো শিক্ষক, যাদের হাতে থাকবে খালি থালাবাটি—প্রতিবাদের ভাষায়, “আমরা খালি হাতে ভবিষ্যৎ গড়ি, কিন্তু আমাদের জীবনে শূন্যতা ছাড়া কিছু নেই।”
শনিবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন,
“আমরা জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলছি, কিন্তু আমাদের নিজের জীবনে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও স্বীকৃতি অধরাই রয়ে গেছে। বছর বছর প্রতিশ্রুতি শুনেছি, কিন্তু বাস্তবে কিছুই পাইনি। এবার না শোনা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।”
সপ্তাহজুড়ে রাজপথে শিক্ষকরা
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা গত এক সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলনে রয়েছেন। তাদের তিন দফা দাবি—
১️⃣ বাড়ি ভাতা ২০ শতাংশে উন্নীত করা,
২️⃣ চিকিৎসা ভাতা পুনঃনির্ধারণ,
৩️⃣ উৎসব ভাতা বৃদ্ধি।
দাবি আদায়ে সপ্তম দিনে এসে গতকাল তারা রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিল করেছেন এবং শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জানিয়েছেন। একই সময়ে শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষকদের একাংশ দুদিন ধরে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি দোয়েল চত্বর হয়ে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত যায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষকরা বলেন,
“মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের শুধু বাড়ি ভাড়া নয়, পুরো বাড়ি লাগে। অথচ আমরা ন্যায্য বাড়ি ভাড়া পর্যন্ত পাচ্ছি না। সপ্তাহজুড়ে রাস্তায় বসে ঘুমিয়ে আছি, তবু কেউ শুনছে না।”
এ সময় গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান কদম ফোয়ারায় শিক্ষকদের বিক্ষোভে যোগ দেন এবং একাত্মতা প্রকাশ করেন।
‘জাতীয়করণই একমাত্র সমাধান’
শিক্ষক সমাজের একাংশ যেখানে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি তুলছেন, সেখানে আরেক পক্ষ সরাসরি জাতীয়করণের দাবি জানাচ্ছে। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন—দেশের অন্যতম বৃহৎ মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠন—বলে দিয়েছে, “কোনো শতাংশ নয়, আমরা চাই চাকরি জাতীয়করণ।”
শনিবার মহাখালীর গাউসূল আজম কমপ্লেক্সে আয়োজিত ‘মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে সংগঠনটির সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন,
“এখন যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা অনেকেই স্ট্যান্ডবাজি করছেন। আমরা কোনো বাড়ি ভাতা বা উৎসব ভাতার হিসাব চাই না—আমরা চাই রাষ্ট্র আমাদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিক। জাতীয়করণ করলেই শিক্ষকদের মর্যাদা ও শিক্ষার মান দুই-ই নিশ্চিত হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমান ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক শাহনেওয়াজ দিলরুবা খান। বক্তারা বলেন, “শিক্ষকদের বঞ্চিত রেখে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারি শিক্ষকদের মতো সুযোগ না পেলে বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে প্রেরণা টিকবে না।”
শিক্ষক সমাজের হতাশা ও বার্তা
দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তাদের অধিকার আদায়ে রাজপথে আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদের একাধিক বৈঠকে আশ্বাস মিললেও বাস্তবে পরিবর্তন আসেনি।
এখন শিক্ষকদের ভাষায়, “আমরা আর আশ্বাস চাই না, চাই বাস্তবায়ন।”
আজকের ‘ভুখা মিছিল’কে শিক্ষকরা বলছেন তাদের শেষ প্রতীকী প্রতিবাদ—এরপর যদি সরকার কোনো সাড়া না দেয়, তারা অসীম মেয়াদি কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
শিক্ষকরা বলেন,
“আমরা বই হাতে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে চাই, কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে নয়। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
