রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বড় চমক দেখিয়েছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। সর্বশেষ প্রাপ্ত অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে ভিপি (সহসভাপতি) পদে এ প্যানেলের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়ী হচ্ছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার, এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে এগিয়ে আছেন ছাত্রশিবিরের সালমান সাব্বির।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের ভোট গণনা শেষে এ চিত্র উঠে এসেছে। কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনাররা।
ভিপি পদে শিবির প্রার্থীর একচ্ছত্র আধিপত্য
রাকসুর মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ভিপি পদে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ পেয়েছেন ১৩,১৫৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর পেয়েছেন ৩,৮৯৮ ভোট, এবং সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ–এর তাসিন খান পেয়েছেন মাত্র ৩৪১ ভোট।
এতে বোঝা যাচ্ছে, ভিপি পদে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্রার্থী প্রায় তিনগুণ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
জিএস পদে জয় পাচ্ছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’র সালাউদ্দিন আম্মার
জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার। ঘোষিত ফলাফলে তিনি পেয়েছেন ১১,৬৮৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবিরের ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫,৭৯৬ ভোট, এবং ছাত্রদলের নাফিউল জীবন পেয়েছেন মাত্র ১৮ ভোট।
এ পদে জয়ী প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
এজিএস পদে কাছাকাছি লড়াইয়ে এগিয়ে শিবির প্রার্থী
সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্রার্থী সালমান সাব্বির পেয়েছেন ৭,৩৬৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল–সমর্থিত জাহিন বিশ্বাস এষা পেয়েছেন ৬,২৯৬ ভোট, আর স্বতন্ত্র/ঐক্যজোটের সজিবুর রহমান পেয়েছেন ৫৪১ ভোট।
এ পদে ভোটের ব্যবধান তুলনামূলক কম হলেও, সালমান সাব্বিরের এগিয়ে থাকা নিশ্চিত করেছে ছাত্রশিবিরের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়ের সম্ভাবনা।
হলভিত্তিক ফলাফলেও একই প্রবণতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের পাঁচটি ও ছেলেদের ১২টি হলে একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
- মন্নুজান হল, রোকেয়া হল, তাপসী রাবেয়া হল ও রহমতুন্নেসা হল—সবকটিতেই ভিপি পদে মোস্তাকুর রহমান জাহিদ এগিয়ে।
- জিএস পদে প্রায় সব হলে সালাউদ্দিন আম্মার জয়ী হয়েছেন।
- এজিএস পদে শিবির–ছাত্রদল প্রার্থীদের মধ্যে কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও শেষ পর্যন্ত সালমান সাব্বির এগিয়ে রয়েছেন।
বিশেষ করে বিজয়–২৪, জিয়াউর রহমান, মাদার বখশ, সোহরাওয়ার্দী, ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের ফলাফলগুলোতে দেখা গেছে, তিনটি প্রধান পদেই এই তিন প্রার্থী বিপুল ভোটে এগিয়ে আছেন।
১১ প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আলোচনায় ছিল ৮টি
এবারের রাকসু নির্বাচনে মোট ১১টি প্যানেল অংশ নেয়। এর মধ্যে আলোচিত ৮টি হলো—
১️⃣ ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’,
২️⃣ ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’,
৩️⃣ ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’,
৪️⃣ সাবেক সমন্বয়কদের ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’,
৫️⃣ বাম জোটের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’,
৬️⃣ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ঘোষিত ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’,
৭️⃣ নারী নেতৃত্বাধীন ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’,
৮️⃣ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন–সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’।
ক্যাম্পাসে উল্লাস, ফল ঘোষণায় অপেক্ষা
ভোর থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছিল ভোটগণনার উত্তেজনা। ফল ঘোষণার পর ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ ও ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সমর্থকরা বিজয়ের আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়েন।
অন্যদিকে, পরাজিত প্যানেলগুলোর প্রার্থীরা ফলাফল নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি।
রাকসুর ইতিহাসে এক দশকেরও বেশি সময় পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ছাত্ররাজনীতির নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, “এই নির্বাচন শুধু ফলাফলের জন্য নয়, ছাত্র রাজনীতির পুনর্জাগরণের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”
