মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম তিন হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদানের দাবিতে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা স্থগিত করে আমরণ অনশন ঘোষণার ঘোষণা দিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী এ ঘোষণা দেন। এর আগে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার–এর সঙ্গে সচিবালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও তাতে কোনো ফলাফল আসেনি বলে জানান শিক্ষকরা।
‘আমাদের দেহ এখান থেকে জীবিত যাবে না’
দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন,
“আমাদের নতুন কর্মসূচি—২৪ ঘণ্টা অবস্থান অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল দুপুর দুইটা থেকে আমরা অনশন শুরু করব। এরপরেও যদি সরকারের বোধোদয় না হয়, আমরা আমরণ অনশনে যাব। আমাদের দেহ এখান থেকে জীবিত যাবে না, আমাদের লাশ এখান থেকে যাবে।”
তিনি আরও বলেন,
“ক্লাস তো এমনিতেই বন্ধ, কিন্তু রোববার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে। পরীক্ষাসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে।”
এর মাধ্যমে শিক্ষক আন্দোলন আরও কঠোর আকার ধারণ করছে।
সরকারের বৈঠকে ‘আইওয়াশ’ অভিযোগ
বিকেলে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে দেলোয়ার আজিজী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন,
“আলোচনার নামে আইওয়াশ করা হয়েছে। আলোচনার অর্থ হচ্ছে উভয় পক্ষ কিছু ছাড় দেবে, কিন্তু তাঁরা কোনো ছাড় দিতে রাজি নন।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা উপদেষ্টাকে বাবা সম্বোধন করে বলেছি—আমাদের ডালভাতের ব্যবস্থা করে দিন। আমরা কেঁদেছি, অনুরোধ করেছি, কিন্তু তিনি বক্তব্যে অনড় থেকেছেন।”
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বৈঠকে বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। আজিজীর ভাষায়,
“আমরা বলেছি, চলতি অর্থবছরে ১০ শতাংশ এবং পরবর্তী বাজেটে আরও ১০ শতাংশ দিন, প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করে দিন। কিন্তু তাও তাঁরা বিবেচনা করেননি।”
রাজনৈতিক দলের অনুরোধে পদযাত্রা স্থগিত
আজিজী জানান, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে যেন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা আপাতত স্থগিত রাখা হয়।
“তাঁরা বলেছেন, এই কর্মসূচি করলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হতে পারে, সুযোগসন্ধানীরা আন্দোলনে ঢুকে পড়তে পারে। তাই আমরা তাঁদের অনুরোধে পদযাত্রা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” বলেন তিনি।
তবে আন্দোলন চলবে আগের মতোই, বলেন শিক্ষকদের এই নেতা।
প্রেক্ষাপট: আন্দোলনের সূত্রপাত ও উত্তেজনা
গত ৫ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করলে শিক্ষকরা সেটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।
এর পর থেকে তাঁরা তিন দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত সোমবার প্রেস ক্লাবের সামনে তাঁদের কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ হলে আন্দোলন আরও উত্তপ্ত হয়।
পরে শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান শুরু করেন, সেখানেই দিনরাত অবস্থান কর্মসূচি চলছে।
এর মধ্যে তাঁরা শাহবাগ মোড়েও আড়াই ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
‘রাষ্ট্র যদি আমাদের তিন হাজার টাকা না দিতে পারে, দেউলিয়া হয়ে যাক’
দেলোয়ার আজিজী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কেনা হয়, প্রকল্পের নামে টাকা তসরুপ হয়—কিন্তু আমাদের তিন হাজার টাকা বাড়িভাড়া দিতে পারে না! রাষ্ট্র যদি শিক্ষকদের ডালভাতের ব্যবস্থা করতে না পারে, তবে এই রাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে যাক।”
তিনি আরও বলেন,
“প্রয়োজনে আমরা না খেয়ে মরব, কিন্তু দাবির প্রশ্নে এক চুলও নড়ব না। ক্লাসে ফিরব না, পরীক্ষা নেব না। আমরা সিএনজি-রিকশা চালিয়ে, দিনমজুরি করে জীবনযাপন করব।”
অচলাবস্থার আশঙ্কা
শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণায় দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলোর ক্লাস ও পরীক্ষার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরকার এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে নতুন কোনো ঘোষণা দেয়নি।
শিক্ষকরা অনশনে গেলে তা শিক্ষা খাতে গুরুতর সংকট তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
