চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের প্রাক্কালে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যজোট ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) প্রার্থী সুদর্শন চাকমা এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহার ঘোষণার সময় প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থী ও সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন। বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর এই ঐক্যজোটের প্রধান লক্ষ্য—গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।
“গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়তে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম”
ইশতেহার ঘোষণার আগে প্যানেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন,
“আমরা ইতিহাসের সব গণসংগ্রামের উত্তরাধিকার বহন করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, নিয়মিত চাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখব।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের এই প্যানেল কেবল নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নয়; বরং একটি অংশগ্রহণমূলক ও নিরাপদ বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের অঙ্গীকার বহন করে। শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আবাসন ও পরিবহনের নিশ্চয়তা এবং নারী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিরাপদ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
ইশতেহারের মূল প্রতিশ্রুতিগুলো
‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলের ঘোষিত ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবন, শিক্ষা ও গবেষণা, নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক বিকাশকে কেন্দ্র করে ৯টি অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো হলো—
- নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠন – ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও দখলদারিত্ব বন্ধ করে সবার জন্য মুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা।
- আবাসন ও পরিবহন সংকট নিরসন – শিক্ষার্থীদের জন্য সুলভ ও পর্যাপ্ত আবাসনব্যবস্থা এবং পরিবহন সংকট সমাধানে টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ।
- খাদ্য ও স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন – ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়ায় মানসম্মত ও সুলভমূল্যের খাবার সরবরাহ; বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে আধুনিকায়ন।
- পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস – বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাশয় সংরক্ষণ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।
- শিক্ষা ও গবেষণায় স্বচ্ছতা – গবেষণা তহবিল বৃদ্ধি ও শিক্ষকদের একাডেমিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠা।
- সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিকাশ – সাংস্কৃতিক চর্চা, সংগীত, নাটক ও খেলাধুলার প্রসারে ছাত্রসংসদকে কার্যকর ভূমিকা দিতে প্রতিশ্রুতি।
- জাতিগত বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি – পাহাড়ি ও অন্যান্য জাতিগত শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় বিশেষ নীতি প্রণয়ন।
- নারীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় – নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নেতৃত্বে অংশগ্রহণ ও হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর কমিটি গঠন।
- গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন ও মানবাধিকার রক্ষা – প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য ও প্রত্যয়ের বার্তা
সংবাদ সম্মেলনে জিএস প্রার্থী সুদর্শন চাকমা বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তন আনতে আমরা প্রস্তুত। আমাদের লক্ষ্য, চাকসুকে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার প্রকৃত প্ল্যাটফর্মে পরিণত করা।”
প্যানেলের সহ-জিএস (এজিএস) প্রার্থী জশদ জাকির বলেন, “আমরা এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় চাই যেখানে ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ বা মতভেদের কারণে কেউ বঞ্চিত হবে না। বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি।”
সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের অন্য সদস্যরাও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান—নির্বাচনে সচেতনভাবে অংশ নিতে এবং গণতন্ত্রচর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।
চাকসু নির্বাচনে নতুন উদ্দীপনা
দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন মতাদর্শের সংগঠন ইতোমধ্যে প্রার্থী তালিকা ও ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বামপন্থি সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ এই প্যানেল নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের দাবি ও সমস্যাগুলোকে কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে সক্ষম হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একাংশও মনে করছেন, বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেলের ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার হবে।
পরিবর্তনের প্রত্যাশা
ইশতেহার ঘোষণার মাধ্যমে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল আসন্ন চাকসু নির্বাচনে নিজেদের প্রস্তুতি ও লক্ষ্য স্পষ্ট করেছে। তারা বিশ্বাস করে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব বিকশিত হবে—যারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শিক্ষার্থীর অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
প্যানেলটির ভাষায়, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হবে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক—একটি গণতান্ত্রিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস।”
