সরকারের বিভিন্ন নীতিগত পদক্ষেপ ও আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদারের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি “ধ্বংস হয়নি”, বরং কঠিন সময় পেরিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পথে রয়েছে।
রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘নগদ-ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে পুনরুজ্জীবনের দিকে অর্থনীতি
অর্থ উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে স্মরণ করেন, গত আগস্ট মাসটি ছিল দেশের জন্য একটি কঠিন সময়। নানা অর্থনৈতিক চাপ, মূল্যস্ফীতি, ডলারের সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি—এসব মিলিয়ে অর্থনীতি এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তবে সরকারের যথাসময়ের সিদ্ধান্ত ও নীতি সংশোধনের কারণে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. সালেহউদ্দিনের মতে, অর্থনীতি এখন “রিকভারি মোডে” রয়েছে এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে দৃশ্যমান উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রবণতা অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
“বাংলাদেশকে বিশ্বের দৃষ্টিতে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে”
দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু সংকট—যেমন ব্যাংক খাতের অনিয়ম, বাজেট ঘাটতি, মূল্যস্ফীতির চাপ—এখনো রয়ে গেছে বলে স্বীকার করেন উপদেষ্টা। তবে তিনি দাবি করেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি আগের তুলনায় অনেক বেশি ইতিবাচক।
তিনি বলেন, “বড় বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত। তারা আমাদের অর্জনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের যে ধারা তৈরি হয়েছে, তারা সেটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।”
ব্যয় সাশ্রয়–শৃঙ্খলা–জবাবদিহিতা: ভবিষ্যতের করণীয়
অর্থ উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনায় সংযম, জবাবদিহিতা ও বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর তিনি জোর দেন।
তিনি বলেন, অতীতের কিছু মেগা প্রকল্প যথাযথ মূল্যায়ন ছাড়া অনুমোদন পেয়েছিল। শত শত কোটি টাকা খরচ করেও এসব প্রকল্প থেকে প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যায়নি। “কিছু প্রকল্প এখন শুধু স্মারক বা ভাস্কর্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে,” মন্তব্য করেন তিনি।
এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে বলেও তিনি আহ্বান জানান।
“আগামী মাসগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”
ড. সালেহউদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতির জন্য আগামী কয়েক মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, চলমান নীতিগত কাঠামো ও পরিকল্পনাগুলোকে সংশোধন, সমন্বয় ও শক্তিশালী করে নির্বাচিত সরকারের কাছে হস্তান্তর করা বর্তমান সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। ভবিষ্যতের সরকার যেন এগুলোকে আরও আধুনিক ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে—সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
শুধু অর্থনীতি নয়—মানবিক উন্নয়নই মূল লক্ষ্য
রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন শুধু অবকাঠামো বা সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এ কথাও জোর দিয়ে বলেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি মনে করেন, জাতির উন্নয়ন হবে তখনই, যখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও মানবিক খাতে যথাযথ বিনিয়োগ করা হবে।
“মানুষ শুধু খাদ্য ও মৌলিক চাহিদা চায় না; তারা মর্যাদা, নিরাপত্তা ও মানসম্মত জীবন চায়,”—বলেন ড. সালেহউদ্দিন। তাঁর মতে, উন্নয়নকে বিস্তৃত অর্থে দেখতে না পারলে প্রকৃত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।
গঠনমূলক সাংবাদিকতা—উন্নয়নের সহায়ক শক্তি
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের দায়িত্বশীলতা দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। প্রকৃত সত্য উদঘাটন, তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন ও গঠনমূলক সমালোচনা সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরুন, কিন্তু তা যেন হয় গঠনমূলক। দেশকে এগিয়ে নিতে আপনাদের সততা ও সাহস প্রয়োজন।”
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তা
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএপিও–নগদের ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান কায়সার এ. চৌধুরী। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
তাঁরা সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মিডিয়ার নতুন চ্যালেঞ্জ এবং দায়িত্বশীল প্রতিবেদনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited