দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বাড়তে থাকায় সরকার প্রয়োজন হলে আমদানির অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না এলে আমদানি খুলে দেওয়া হবে।
আজ রোববার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ বিশ্লেষণ, বাজার মনিটরিং জোরদার এবং সম্ভাব্য নীতি-ব্যবস্থা নিয়ে ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ—তবুও বাজার অস্থির
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, দেশে পেঁয়াজের কোনো বাস্তব সংকট নেই। বরং চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে এবং পর্যাপ্ত মজুতও রয়েছে। “আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। ফলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসার কথা। কিন্তু চার-পাঁচ দিনের মধ্যেও যদি দাম না কমে, তাহলে আমদানি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দেব,” বলেন তিনি।
তিনি জানান, পেঁয়াজ আমদানির জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ২ হাজার ৮০০টি আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। প্রয়োজন হলে অনুমোদন প্রদান করা হবে।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা
সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “হঠাৎ দাম বাড়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। মৌসুমের শেষ ভাগ, ভারী বৃষ্টি, সংরক্ষণের সময় পেঁয়াজ শুকিয়ে ওজন কমে যাওয়া—এসব কারণে সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। এগুলো সাময়িক প্রভাব ফেললেও প্রকৃত সংকট নয়।”
তিনি আরও বলেন, সীমান্তের ওপারেও বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য পেঁয়াজ মজুত করা হচ্ছে বলে তাদের কাছে তথ্য এসেছে। “তবে এটি যাতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, সেই বিষয়ে আমরা সতর্কভাবে নজর রাখছি।”
মজুতদারি বা সিন্ডিকেট কি দায়ী?
সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পিছনে মজুতদার বা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমার কাছে সিন্ডিকেট বা কৃত্রিম সংকট তৈরির কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। সামান্য কিছু ঘাটতি ও বাজারের স্বাভাবিক ওঠানামাই মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে। তবে বাজারে কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বাজারে নিয়মিত নজরদারি করছি। মজুত পর্যাপ্ত, তাই অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো হলে তা সহ্য করা হবে না।”
আমদানির অনুমোদন দিলে কী হবে?
পেঁয়াজ আমদানির জন্য জমা পড়া আবেদনগুলোর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ অনুমোদন দেওয়া হলেও বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বিপুল পরিমাণে বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “যদি আমরা সব আবেদন অনুমোদন করি, তাহলে বাজারে হঠাৎ অতিরিক্ত সরবরাহ তৈরি হবে—যার ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই আমরা বিষয়টি খুব সতর্কভাবে বিবেচনা করছি। বাজার স্থিতিশীল রাখাই মূল লক্ষ্য, অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি নয়।”
সরকারের কঠোর নজরদারি
সরকার বাজার পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, মূল্য সামঞ্জস্য রাখতে মন্ত্রণালয় নিয়মিত মাঠ প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি যেন কৃষক ও ভোক্তা—দুই পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ না হয়, সে বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাণিজ্য উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বাজার স্বাভাবিক হবে। “আমরা কৃষক ও ভোক্তা—দু’পক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। প্রয়োজন হলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে, তবে অযথা বাজারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হবে না।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited