প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই–অক্টোবর চার মাসে দেশে এসেছে ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ সময়ে প্রবাসীরা মোট ১,০১৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৮৯৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাত্র চার মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২১ কোটি ডলার বা প্রায় ১৩.৫৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে আসার ধারা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক মাসে সরকার কড়াকড়ি আরোপ করায় অবৈধ অর্থপাচার বা হুন্ডি প্রবণতা কমেছে, ফলে প্রবাসী আয়ের বড় অংশ নিরাপদভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসছে।
রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি ও বৈদেশিক ঋণেও প্রবৃদ্ধি
রেমিট্যান্সের উর্ধ্বমুখী ধারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতাকে আরও মজবুত করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি আয়ও বেড়েছে ৫.৬৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে রপ্তানি বেড়েছিল প্রায় ৮ শতাংশ।
এদিকে বিদেশি ঋণও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুন শেষে দেশের বৈদেশিক ঋণ ১১,২১৬ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় এবং বিদেশি ঋণের ধারাবাহিক বৃদ্ধিই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করছে। ডলারের বিনিময় হার বর্তমানে ১২২ থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে।
মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ স্তরে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশীয় মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২৭.৫৪ বিলিয়ন ডলার, আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ৩২.১৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই রিজার্ভ গত ৩১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তুলনামূলকভাবে দেখলে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার, আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ২৫.৯২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ রিজার্ভ হয়েছিল ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিজার্ভের এই বৃদ্ধিই দেশকে বৈদেশিক লেনদেনে স্থিতিশীল রাখছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হচ্ছে।
সেপ্টেম্বর-অক্টোবর রেমিট্যান্সের তুলনা
গত অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৫৬ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের অক্টোবরের তুলনায় এটি প্রায় ১৭ কোটি ডলার বেশি। তবে সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবরের রেমিট্যান্স ১২ কোটি ডলার কমেছে।
গত অর্থবছরের পুরো রেকর্ড অনুযায়ী তিন হাজার ৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। চলতি অর্থবছরে এ প্রবাহ আরও বাড়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিক ও উচ্চ বেতনের কর্মীদের বৈধ চ্যানেল ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে।
বিশ্লেষকরা বলছেন
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির এই ধারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতার পাশাপাশি আমদানি–রপ্তানিতে সঠিক ব্যালান্স বজায় রাখতে সহায়তা করছে। সরকারের নিয়মিত তদারকি ও ব্যাংকিং চ্যানেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেল কমে এসেছে।
এক বিশ্লেষক বলেন,
“রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক বৃদ্ধি এবং রিজার্ভের উচ্চ স্তরই ডলারের বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আমদানিতে ডলারের অভাবও দেখা দেয় না।”
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক ঋণের সমন্বিত বৃদ্ধির ফলে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হচ্ছে। ডলারের বিনিময় হার, রিজার্ভ ও আমদানির ক্ষেত্রে সংকট না থাকা— এ সবকিছুই সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। আগামী মাসগুলোতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited