দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার এক লাখ মেট্রিক টন নন-বাসমতি ও আতপ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্র ও সরকার-টু-সরকার (জি-টু-জি) চুক্তির আওতায় এই আমদানি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
আজ বুধবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৪২তম সভায় এই প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী মোট ৪৪৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে এই চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার মেট্রিক টন হবে নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল এবং বাকি ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল।
নন-বাসমতি চাল আসবে দুবাই থেকে
প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী, ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল (পারবয়েল্ড রাইস) আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা হবে।
এই চালগুলো আমদানি করবে খাদ্য অধিদপ্তর, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫৫.৯৯ মার্কিন ডলার।
দুবাই-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এম/এস ক্রেডেন্টওয়ান এফজেডসিও দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাল সরবরাহ করবে বাংলাদেশের বিভিন্ন সমুদ্র ও স্থলবন্দরে।
আতপ চাল আসবে মিয়ানমার থেকে
আরেক প্রস্তাবে, কমিটি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সরকার-টু-সরকার (জি-টু-জি) চুক্তির আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।
এই আমদানিতে ব্যয় হবে ২২৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা, প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭৬.৫০ মার্কিন ডলার।
সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হবে মিয়ানমার রাইস ফেডারেশন (এমআরএফ), যার প্রধান কার্যালয় মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসা চালগুলো মূলত নরম দানার আতপ, যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভোক্তাদের মধ্যে জনপ্রিয়।
চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আনাই মূল লক্ষ্য
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দেশে গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সরকারি মজুত বজায় রাখা ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় এই চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই চাল আসার পর সরকারি গুদামে মজুত আরও শক্তিশালী হবে, যা দরকার হলে বাজারে হস্তক্ষেপ করে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।”
অবকাঠামো খাতে নতুন প্রকল্প
সভায় শুধু খাদ্য খাত নয়, অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাতের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়।
এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মীরসরাই ২এ ও ২বি অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রবেশ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
ঢাকাভিত্তিক মনিকো লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অধীনে “জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের” অংশ। সম্পন্ন হলে এটি শিল্প কারখানায় কাঁচামাল পরিবহন, কর্মসংস্থান ও রপ্তানিমুখী শিল্প বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ
অন্যদিকে, বৈঠকে খুলনা বিভাগের পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প পুনর্বিবেচনার প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি নতুন ৩৩/১১ কেভি (১০/১৪ এমভিএ) জিআইএস ধরনের সাবস্টেশন স্থাপন করা হবে।
কমিটি সংশোধিত পদ্ধতিতে পুনরায় ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থিতিশীলতা ও দক্ষতা বাড়ানো যায়।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির এই সিদ্ধান্তগুলো একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে, তেমনি দেশের শিল্পায়ন ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো উন্নয়নেও গতি আনবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তন ও বৈদেশিক মুদ্রার চাপে দেশের খাদ্য মজুত নিশ্চিত রাখতে সময়োপযোগী এই পদক্ষেপ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
