জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রবাসী রেমিট্যান্সই বাঁচিয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সকে দেশকে আর্থিক সংকট থেকে বাঁচানোর মূল চালিকা শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি একেবারে নিচে নেমে গিয়েছিল। আপনাদের রেমিট্যান্সই তা বাঁচিয়েছে।”

শনিবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেরিয়ট মার্কুইস-এ অনুষ্ঠিত ‘এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশিজ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নেন এবং দেশ-বিদেশের নীতি-নির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।

তরুণ শক্তি ও বিনিয়োগ আহ্বান

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তিকে সম্ভাবনার মূল সম্পদ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানান, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করতে উৎসাহিত করে দেশকে উৎপাদন ও শিল্প কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য।

তিনি বলেন, “আপনারা এখন বাংলাদেশের অংশ। আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিনিয়োগ ও নতুন ধারণা নিয়ে আসুন।” এছাড়া তিনি আশ্বাস দেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে।

আঞ্চলিক অর্থনীতি ও সমুদ্র বন্দর পরিকল্পনা

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাত রাজ্য সমুদ্রবন্দরের অভাবে স্থলবেষ্টিত। যদি আমরা তাদের জন্য সমুদ্র উন্মুক্ত করি, সবাই উপকৃত হবে।”
তিনি জানান, কক্সবাজার-মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ইতিমধ্যেই প্রস্তুত এবং বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ অনুসন্ধানও অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশের অর্থনীতি সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশন দেন। তিনি উল্লেখ করেন, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে, এবং গত এক বছরে বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) দ্বিগুণ হয়েছে।

প্রবাসী সম্পৃক্ততা ও প্যানেল আলোচনা

উক্ত অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয় ‘হারনেসিং ডায়াসপোরা অ্যাজ আ ন্যাশনাল অ্যাসেট‘ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা, যা পরিচালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশ নেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির, জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নকীবুর রহমান এবং এনসিপি নেতা ড. তাসনিম জারা।

ড. তাসনিম জারা বলেন, “যখন সবাই একসঙ্গে কাজ করে, ইতিহাস বদলায়। আমরা একসঙ্গে ইতিহাস বদলাবো।”

অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেনও বক্তব্য রাখেন।

উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও প্রবাসীর সরাসরি সংলাপ

সমাবেশে ‘শুভেচ্ছা’ মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়, যা প্রবাসীদের জন্য তথ্য, বিনিয়োগ ও সেবা সহজতর করবে। অনুষ্ঠানটি ছিল ব্যবসা, একাডেমিয়া, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও সামাজিক উন্নয়ন ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর এক বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। প্রবাসীরা এখানে তাদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও উদ্বেগ সরাসরি নীতি-নির্ধারক ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভাগ করতে পারছেন।

প্রবাসী বাংলাদেশের অবদান

অধ্যাপক ইউনূস এবং অন্যান্য প্যানেলিস্টরা প্রবাসীদের অবদানের প্রশংসা করেন, বিশেষ করে জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর অর্থনীতি রক্ষায় তাদের ভূমিকা। প্রবাসীরা শুধু অর্থিক সমর্থনই দেননি, সামাজিক ও নীতিনির্ধারক সংলাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

Masum Talukder