দুর্গাপূজার আনন্দ এখনও শেষ হয়নি, কিন্তু নিম্নচাপের দাপটে দক্ষিণবঙ্গজুড়ে চলছে বৃষ্টির দৌরাত্ম্য। দক্ষিণ ওডিশার ফুলবনিতে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপ ক্রমশ দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হলেও, তার প্রভাবে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকছে বঙ্গোপসাগর থেকে। এর জেরে আরও অন্তত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা বিক্ষিপ্তভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে দক্ষিণবঙ্গজুড়ে।
আবহাওয়া দফতরের মতে, দশমীর দিনই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি, একাদশীতেও সেই ধারা অব্যাহত। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বীরভূমে আজ অতি ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ ও পুরুলিয়ায়। উপকূল সংলগ্ন এলাকায় বইতে পারে দমকা ঝোড়ো হাওয়া।
মৎস্যজীবীদের জন্য জারি করা হয়েছে সমুদ্রে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা। নিম্নচাপের কারণে সমুদ্র উত্তাল থাকায় আগামী কয়েকদিন মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়া একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করেছে হাওয়া অফিস।
আগামী কয়েকদিনের পূর্বাভাস
শনিবার বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমলেও বজ্রবিদ্যুত্-সহ দু-এক পশলা বৃষ্টি হতে পারে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। তবে রবিবার ফের নতুন করে দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। সেদিন কলকাতায় পুজোর কার্নিভাল হলেও বিক্ষিপ্ত বজ্রঝড়-বৃষ্টি থেকে যাবে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলায়।
সোমবার সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও দুই ২৪ পরগনাকে। বজ্রবিদ্যুত্-সহ প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
উত্তরবঙ্গেও দুর্যোগ
শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে আজ অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি হতে পারে উত্তর দিনাজপুরেও। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এসব জেলায় বৃষ্টি ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কাল দ্বাদশীতেও একই পরিস্থিতি বজায় থাকবে।
মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস মিলেছে। সঙ্গে বইতে পারে দমকা ঝোড়ো হাওয়া। রবিবার উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলাতেই অতি ভারী বর্ষণ চলবে বলে আশঙ্কা। সোমবার কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও দার্জিলিং ও সংলগ্ন পাহাড়ি জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি চলতে পারে।
কলকাতার পরিস্থিতি
কলকাতায় আজ শুক্রবার সকালে আকাশ ছিল মেঘলা। মাঝে-মধ্যেই বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি হয়েছে। আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫.৮ ডিগ্রি, গতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৮৮ থেকে ৯৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৯.১ মিলিমিটার।
সাধারণ মানুষের জন্য পরামর্শ
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আপাতত নিম্নচাপের প্রভাবে রাজ্যে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকবে। উপকূলবর্তী এলাকায় মৎস্যজীবীদের না যাওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে ভারী বর্ষণের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
দুর্গাপূজার আনন্দের আবহে এ বার বাড়তি চিন্তা হচ্ছে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা নিয়ে। রাজ্যের সব জেলাতেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী সোমবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা থেকে যাবে।
