ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরে ভক্তদের অতিরিক্ত ভিড়ে পদদলিত হয়ে নয় জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। শনিবার সকালে রাজ্যের শ্রীকাকুলাম জেলার কাসিবুগ্গা এলাকার ঐতিহ্যবাহী ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় প্রশাসনের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সকালে ধর্মীয় পূজা ও দান-অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভোর থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে ভক্তদের ভিড় জমে। পূজার শুরু হতেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খায়। একপর্যায়ে মন্দিরের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের সময় ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়, আর তাতেই ঘটে প্রাণঘাতী পদদলনের ঘটনা।
অন্ধ্র প্রদেশের গভর্নর এস আবদুল নাজির এক বিবৃতিতে বলেন,
“পদদলিত হয়ে নয় জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।”
তিনি জানান, আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং চিকিৎসা সহায়তা দিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন,
“যারা আপনজন হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার গভীর সহানুভূতি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। কেন্দ্র সরকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা দেবে।”
ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক স্থানীয় সাংবাদিক জানান, দুর্ঘটনার সময় মন্দির প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ কোনো পর্যাপ্ত ব্যারিকেড বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেয়নি। অনেক ভক্ত পূজা দেওয়ার জন্য ফটকের সামনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ ভেতরে প্রবেশের তাড়াহুড়োয় সামনে পড়ে থাকা কয়েকজনকে পিষে ফেলে মানুষ।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা বিনোদ কুমার রাও বলেন,
“এটি সম্পূর্ণভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার ফল। এত বড় ধর্মীয় আয়োজনে যথাযথ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। আমরা তদন্ত শুরু করেছি এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভারতে পদদলনের ইতিহাস
ভারতে ধর্মীয় উৎসব ও জনসমাবেশে পদদলনের ঘটনা নতুন নয়। প্রায় প্রতিবছরই এমন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বহু মানুষ।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তামিলনাড়ুর জনপ্রিয় অভিনেতা ও রাজনীতিক থালাপথি বিজয়ের এক নির্বাচনী সমাবেশে পদদলিত হয়ে মারা যান অন্তত ৩৬ জন।
এর আগে জুন মাসে, ওড়িশার উপকূলীয় এলাকায় এক হিন্দু উৎসবে তিন জন নিহত হন। মে মাসে গোয়া রাজ্যে আগুনের ওপর হাঁটার অনুষ্ঠানে ভিড়ের চাপে ছয় জনের মৃত্যু হয়।
আর জানুয়ারিতে প্রয়াগরাজের ঐতিহাসিক কুম্ভমেলায় পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান অন্তত ৩০ জন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের ধর্মীয় আবেগ ও বিপুল জনসংখ্যা মিলিয়ে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বহু ক্ষেত্রে মন্দির বা ধর্মীয় স্থানে নিরাপত্তা ও প্রবেশ-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ঘাটতিই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মানবিক আহ্বান
স্থানীয় এক সমাজকর্মী লক্ষ্মী রাও বলেন,
“প্রতিবারই আমরা একই সংবাদ শুনি—‘পদদলিত হয়ে অমুক সংখ্যক মানুষের মৃত্যু’। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনো প্রতিকার হয় না। সরকারের উচিত ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে ভিড় ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা।”
এদিকে দুর্ঘটনার পর কাসিবুগ্গা শহরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মন্দির এলাকাটি আপাতত বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। নিহতদের পরিবারকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর শত শত ধর্মীয় আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে লাখো মানুষ অংশ নেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও জননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় এসব ধর্মীয় ভক্তির আসর প্রায়ই পরিণত হয় মৃত্যুর মিছিলে।



সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited