অফিসের ব্যস্ত সময়ে হাওড়া মেট্রো স্টেশনে নিত্যযাত্রীদের একটাই অভিযোগ— লাগেজ স্ক্যানারে গলদ, ফলে দীর্ঘ লাইন আর ট্রেন মিসের দুঃসহ অভিজ্ঞতা।
ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর শুরু থেকেই হাওড়া হয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ শহরের নানা প্রান্তে যাতায়াত করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে লাগেজ স্ক্যানারের বিভ্রাটে সেই যাত্রা হয়ে উঠছে ভোগান্তির।
ভিড়ে ঠাসা প্ল্যাটফর্ম, থমকে যাত্রীস্রোত
হাওড়া ময়দান থেকে শুরু করে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত অফিস সময়ে থাকে উপচে পড়া ভিড়। মূলত লোকাল ট্রেনে বিভিন্ন জেলা বা শহরতলি থেকে আগত যাত্রীরাই এখানে মেট্রো ধরেন। তাঁদের অনেকের গন্তব্য এসপ্ল্যানেড বা বিবাদী বাগ— মাত্র ৬ থেকে ৮ মিনিটের পথ।
এই সুবিধার কারণেই সকালে বিপুল ভিড় নামে হাওড়া মেট্রো স্টেশনে। কিন্তু অভিযোগ, স্ক্যানার মেশিনের ধীরগতি বা অকেজো অবস্থায় সেই যাত্রাপথে জট তৈরি হচ্ছে।
এক অফিসযাত্রী বলেন,
“স্টেশনে সময়মতো পৌঁছেও স্ক্যানারের সামনে আটকে যাচ্ছি। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ট্রেন মিস হয়ে যাচ্ছে।”
আরও কয়েকজন নিয়মিত যাত্রীর অভিযোগ, প্রায়ই দেখা যায় দু’টি স্ক্যানারের মধ্যে একটি বন্ধ থাকে। ফলে কার্যত একটিমাত্র স্ক্যানার দিয়েই শত শত যাত্রীর লাগেজ পরীক্ষা করতে হয়।
লাইন লম্বা, সময় নষ্ট
অফিসের ব্যস্ত সময়ে হাওড়া মেট্রোর প্রবেশপথে স্ক্যানারের সামনে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ সারি।
যাত্রীদের অনেকে জানিয়েছেন, “টিকিট পাঞ্চিং মেশিনের সামনে কোনও ভিড় না থাকলেও স্ক্যানারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ৫-১০ মিনিট।”
ফলে অফিস সময় মিস হচ্ছে, বাড়ছে চাপ ও ক্ষোভ।
একজন শিক্ষার্থী জানান,
“অনেক সময় ব্যাগ না স্ক্যান করেই ম্যানুয়ালি চেক করে ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন কর্মীরা, কারণ ভিড় সামলানো যাচ্ছে না।”
মেট্রোরেলের দাবি: ‘সব স্ক্যানার সচল’
যদিও মেট্রো রেলের পক্ষ থেকে যাত্রীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের দাবি, হাওড়া স্টেশনে দু’টি স্ক্যানারই সচল এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে অতিরিক্ত ম্যানুয়াল স্ক্যানিং ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
মেট্রোর এক জ্যেষ্ঠ আধিকারিক বলেন,
“স্ক্যানার অকেজো হয়ে থাকার কোনও খবর নেই। দু’টি মেশিনই সচল। ভিড়ের চাপে কখনও লাইনের দৈর্ঘ্য বাড়তে পারে, কিন্তু তা বিভ্রাট নয়।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“যাত্রীদের দ্রুত ছাড়ার জন্য প্রয়োজনে ম্যানুয়াল স্ক্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনও যাত্রীকে যেন দেরি না হয়, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।”
যাত্রীরা বলছেন অন্য কথা
তবে নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য ভিন্ন। তাঁদের মতে, ভিড়ের সময় স্ক্যানারগুলির একটিতে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয় প্রায়ই। কিন্তু মেট্রোর পক্ষ থেকে সেটি অস্বীকার করা হয়।
এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“যন্ত্র সচল থাকলে এমন লাইন তৈরি হবে কেন? ভিড়ের সময় ৫ মিনিট দেরি মানেই ট্রেন মিস।”
বাড়ছে যাত্রীচাপ, উন্নয়ন জরুরি
ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর রুটে যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। অফিস সময়ের বাইরে, সাধারণ দিনেও হাওড়া স্টেশনে এখন যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যাত্রীচাপ সামাল দিতে আরও উন্নত স্ক্যানার ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা লেন চালুর পরিকল্পনা আছে।
রেল–সূত্রে জানা গিয়েছে, পিক আওয়ারে প্রতিটি ট্রেনে গড়ে ১,২০০–১,৫০০ যাত্রী ওঠানামা করেন হাওড়া মেট্রো স্টেশনে। তাই যাত্রী প্রবাহ সামলাতে ছোটখাটো বিভ্রাটও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
একদিকে কলকাতার মেট্রো যোগাযোগ ক্রমে আধুনিক হচ্ছে, অন্যদিকে সামান্য যান্ত্রিক জটিলতা বা জনবলের ঘাটতিতেই যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যাচ্ছে।
যাত্রীরা চাইছেন দ্রুত সমাধান— যাতে অফিসের ব্যস্ত সকালে ‘স্ক্যানারের লাইন’-এ নয়, মেট্রোর আসনে বসেই শুরু হয় দিনের পথচলা।
সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited