কালীপুজোর আগের দিন সকালেই আতঙ্ক ছড়াল পশ্চিম মেদিনীপুরে। রবিবার ভোরে সবং ব্লকের নীলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন তেমাথানি–পটাশপুর রাজ্য সড়কে মুখোমুখি ধাক্কায় জ্বলে উঠল দুটি ডাম্পারের একটি। আগুনের তীব্রতায় মুহূর্তের মধ্যেই কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। আগুন নেভাতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লড়াই চালায় দমকল বাহিনী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুলিশ চালায় কড়া নজরদারি ও যান নিয়ন্ত্রণ অভিযান। সৌভাগ্যবশত, কোনও হতাহতের খবর মেলেনি।
ভোরের আঁধারে ভয়াবহ শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা
স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, রবিবার ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ আচমকাই প্রবল শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তের মধ্যেই দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে একটি ১৮ চাকার ডাম্পার। আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের খড়ের গাদায়। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো এলাকায় কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা সুব্রত দে বলেন,
“প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখি আগুন আকাশ ছুঁই ছুঁই করছে। পাশে খড়ের গাদাতেও আগুন ধরে গেছে। সবাই মিলে পানি ঢালতে শুরু করি, কিন্তু আগুন এত ভয়ানক ছিল যে কিছুই করা যাচ্ছিল না।”
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত থেকেই একটি মোরাম বোঝাই ডাম্পার নীলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ওই সময় পটাশপুর দিক থেকে আসা একটি ভারী মালবোঝাই ১৮ চাকার ডাম্পার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়ানো ডাম্পারের পেছনে সজোরে ধাক্কা মারে।
ধাক্কার তীব্রতায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায় ১৮ চাকার ডাম্পারে। ইঞ্জিন থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে জ্বালানি ট্যাঙ্কে, সেখান থেকে বিস্ফোরণ হয় বলে প্রাথমিক অনুমান দমকলের।
চারটি দমকল ইঞ্জিনের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে
খবর পেয়ে সবং ও পাশের দাসপুর দমকল কেন্দ্র থেকে চারটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দমকল কর্মীরা প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
সবং দমকলের এক কর্মকর্তা জানান,
“আগুন ভয়াবহ ছিল। আশপাশে দাহ্য পদার্থ থাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। সময়মতো পৌঁছাতে পারায় বড় বিপর্যয় এড়ানো গেছে।”
দমকলের পাশাপাশি সবং থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান চলাচল বন্ধ করে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে।
যান চলাচলে বিপর্যয়, দীর্ঘ যানজট
দুর্ঘটনার জেরে তেমাথানি–পটাশপুর রাজ্য সড়কের দুই প্রান্তে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ট্রাক, বাস ও ছোট গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ে। প্রায় সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এক ট্রাকচালক বলেন,
“ভোর থেকে আটকে ছিলাম। আগুনের ভয়াবহতা দেখে কেউ সামনে যাওয়ার সাহস পায়নি। সকাল আটটার পর রাস্তা খুলে যায়।”
চালক-খালাসির খোঁজে তল্লাশি
দুর্ঘটনার পর থেকেই দুই ডাম্পারের চালক ও খালাসি পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। স্থানীয় থানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গতি বা ড্রাইভারের তন্দ্রার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
সবং থানার এক কর্মকর্তা বলেন,
“দু’টি ডাম্পারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। কে বা কারা দায়ী তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি ও আতঙ্ক
আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে একটি ডাম্পার। অন্যটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খড়ের গাদায় আগুন ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় কৃষকদের কিছু ফসল নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও দমকলের দ্রুত পদক্ষেপে আশেপাশের দোকান ও বসতবাড়ি রক্ষা পেয়েছে।
সবংয়ের এই দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি ও রাতের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা। দমকলের দ্রুত তৎপরতা ও পুলিশের সময়োচিত নজরদারিতে বড় বিপর্যয় এড়ানো গেলেও, প্রশাসন এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited