দশমী পেরিয়ে গেলেও পুজোর আমেজ এখনো কাটেনি দিঘায়। উপকূলীয় এই জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে চলছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি আর উত্তাল সমুদ্রও থামাতে পারেনি ভ্রমণপিপাসু মানুষের ঢল। প্রশাসন জানিয়েছে, এখন প্রতিদিনই লক্ষাধিক মানুষ ভিড় করছেন সৈকতে, আর ব্যবসায়ীরা বলছেন—এবারের পুজো মৌসুমে দিঘার অর্থনীতি নতুন প্রাণ পেয়েছে।
বৃষ্টির মাঝেও উচ্ছ্বাস অটুট
নিম্নচাপের প্রভাবে দশমীর সকাল থেকে শুরু হয়েছে অনিয়মিত বৃষ্টি। তবে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী নবমীর রাত পর্যন্ত আবহাওয়া ছিল পরিষ্কার, ফলে পুজোর মূল চার দিন উপভোগ করেছেন হাজার হাজার পর্যটক। দশমীর দিনও আকাশ মেঘলা থাকলেও থেমে থাকেনি ভ্রমণকারীরা।
দিঘা, তাজপুর ও মন্দারমণির সৈকতে সকাল থেকেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। অনেকে সমুদ্রতটে হাঁটতে বেরিয়েছেন, কেউবা ছাতা মাথায় করে ছবি তুলেছেন। হোটেলগুলোর সামনে সারি সারি গাড়ি, আর স্থানীয় দোকানগুলোতেও ভিড় লেগেই ছিল।
ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি
দিঘা হোটেল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, পুজোর আগের দিনগুলোতে বুকিং নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও পুজোর সময় থেকে হোটেলগুলো একের পর এক পূর্ণ হয়ে যায়। দিঘা–শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন,
“লক্ষ্মী পুজো পর্যন্ত বুকিং খুব ভালো চলছে। পুজোর আগাম বুকিং কম ছিল, কিন্তু স্পট বুকিংয়ের চাপ এত বেশি ছিল যে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ রুম ভরে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা এবার বেশ খুশি।”
একই সুর মন্দারমণি হোটেল মালিক সংগঠনের সহসভাপতি দেবরাজ দাসের কণ্ঠেও—
“শুক্রবার থেকেই বুকিং বেড়েছে। এখন প্রায় সব হোটেলই পর্যটকে ঠাসা। আবহাওয়া যেমনই হোক, পর্যটকদের উৎসাহ একটুও কমেনি।”
দিঘা–তাজপুর–মন্দারমণি মিলিয়ে এই সময় প্রায় ৮ লক্ষ পর্যটক ভিড় করেছেন বলে দাবি করেছে স্থানীয় পর্যটন সংগঠন। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, স্থানীয় দোকান ও টোটোচালকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
জগন্নাথ মন্দিরে প্রথম দুর্গাপুজো, রেকর্ড ভিড়
এবারের পুজোতে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে দুর্গাপুজো। দেবী সুভদ্রাকে দুর্গা রূপে পূজা করা হয়, যা দেখতে প্রতিদিনই লক্ষাধিক মানুষ মন্দিরে ভিড় জমিয়েছেন। মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত চলেছে বিশেষ আরতি, ভোগ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ইসকন কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দিঘা জগন্নাথ মন্দির ট্রাস্টি কমিটির সদস্য রাধারমণ দাস বলেন,
“এই বিশেষ পুজো দেখতে এমন ভিড় আমরা আগে কখনো দেখিনি। প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ এসেছেন। এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।”
প্রশাসনের কড়া নজরদারি
বৃষ্টির পাশাপাশি উত্তাল সমুদ্রের কারণে প্রশাসনও সতর্ক অবস্থানে। জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আধিকারিক নিরঞ্জন মণ্ডল জানান,
“এখনও পর্যন্ত কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি, তবে কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতির উপর নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তরের নির্দেশ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) আবুনুর হোসেন বলেন,
“পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সৈকতজুড়ে পুলিশ ও নুলিয়ারা টহল দিচ্ছেন। বৃষ্টি ও সমুদ্রের ঢেউ বেড়ে গেলেও পর্যটকদের নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে।”
উইকএন্ডে আরও ভিড়ের আশা
আবহাওয়া এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল না হলেও প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা আশাবাদী—আসন্ন উইকএন্ডে দিঘা, তাজপুর ও মন্দারমণিতে আরও বড় ভিড় হবে। কারণ, লক্ষ্মী পুজো উপলক্ষে অনেকেই এখনো ঘুরতে আসার পরিকল্পনা করছেন।
স্থানীয় দোকানি পরেশ জানা বলেন,
“বৃষ্টি একটু কমলেই সৈকত ভরে যায়। পুজোর সময় ব্যবসা যেমন ভালো ছিল, এখনো তেমন চলছে। মানুষ আনন্দ করতে জানে—বৃষ্টি তাদের থামাতে পারে না।”
বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ও উত্তাল সমুদ্র সত্ত্বেও দিঘা এখন উৎসবের শহর। পুজোর ছুটি শেষ হলেও পর্যটকদের ঢল বাড়ছেই। আবহাওয়া হয়তো মেঘলা, কিন্তু দিঘার বাতাসে এখনো ভাসছে পুজোর আনন্দ আর মানুষের অদম্য উচ্ছ্বাস।
