সল্টলেকের স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিলার অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে নাম জড়ালেও নিজেকে এখনও ‘দাবাং অফিসার’ বলেই দাবি করেছেন রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন। শুক্রবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার না করলেও পুলিশ ইতিমধ্যে নিউটাউন ও সল্টলেকের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সেই ফুটেজেই দেখা গেছে—২৮ অক্টোবর প্রশান্ত বর্মন নিউটাউন অ্যাকশন এরিয়া–১-এর এবি ব্লকের ৬৭ নম্বর বহুতলে প্রবেশ করছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই বহুতলে তিনি বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। একই ভবনে সোনা চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত অশোক কর এবং স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিলাকেও বিডিওর সঙ্গে ঢুকতে দেখা যায়। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রশান্ত সাংবাদিকদের বলেন—
“অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে আমি কলকাতায়ই যাইনি। নিউটাউনে আমার কোনও বাড়ি নেই। এসব ষড়যন্ত্র।”
বিমানযাত্রার তথ্যেই মিলল বিডিওর কলকাতা–আসার প্রমাণ
বিধাননগর দক্ষিণ থানার তদন্তে উঠে এসেছে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
তদন্তকারীদের দাবি—২০ অক্টোবর প্রশান্ত বর্মন বাগডোগরা থেকে ইন্ডিগোর (6E 6135) ফ্লাইটে কলকাতায় আসেন। সিট নম্বর ২৫E (মিডল সিট)। রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে পৌঁছান কলকাতায়। ২৯ অক্টোবর তিনি ফের ইন্ডিগোর (6E 6134) ফ্লাইটে ২৬A (উইন্ডো সিট) নিয়ে বাগডোগরার উদ্দেশে রওনা দেন
কলকাতা বিমানবন্দরে আসা–যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ ও যাত্রী তালিকায় তার নাম ও ছবি মিলেছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এত প্রমাণ সত্ত্বেও এখনও তাকে জিজ্ঞাসাবাদে না ডাকায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
অশোক–স্বপন–প্রশান্ত: সোনাচুরির ঘটনা থেকে খুন—সবই এক সুতোয় বাঁধা?
তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই সোনা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত অশোক করকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
জানা গেছে—অশোক মেদিনীপুরের বাসিন্দা, নিউটাউনের গৌরাঙ্গনগরে ভাড়া থাকতেন, বছরখানেক আগে এবি ব্লকের ৬৭ নম্বর ভবনে কেয়ারটেকারের চাকরি পান, ওই ভবনেই মাঝে মাঝেই যেতেন বিডিও প্রশান্ত।
অভিযোগ, ৫০০–৬০০ গ্রাম সোনার গয়না চুরি করে অশোক তা বিক্রি করতেন স্বপন কামিলার কাছে।
চুরির কথা জানতে পেরে বিডিও তাকে মারধর করেন, তখনই অশোক স্বপনের নাম প্রকাশ করেন।
অভিযোগ অনুযায়ী—
২৮ অক্টোবর প্রশান্ত অশোক ও স্বপনকে নিউটাউনের সেই বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করেন।
পরদিন যাত্রাগাছি থেকে স্বপনের দেহ উদ্ধার হয়।
এখানেই বড় প্রশ্ন—
যদি সত্যিই সোনা চুরি হয়ে থাকে, তবে বিডিও থানায় অভিযোগ করলেন না কেন? আইন নিজের হাতে নিলেন কেন?
‘আমার ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা’ — প্রশান্তের অভিযোগ
প্রশান্ত বর্মন সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন—“পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজ সঠিক নয়।“আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি দুর্নীতি বন্ধ করায় ব্লকের অনেকের স্বার্থে আঘাত লেগেছে।“আমি মেদিনীপুরের দাঁতন বা নিউটাউনে যাইনি।”“আমি কাজ করতাম বলে সবাই আমাকে দাবাং বলত। এখন মিথ্যা অভিযোগে আমায় দোষী বলা হচ্ছে!”
তিনি আরও বলেন—
“আমার কোনও সোনা চুরি হয়নি। এলএলবি করেছি, খুব শিগগিরই আমার নামে ডক্টরেট যুক্ত হবে। পুলিশ ডাকলে অবশ্যই যাব।”
নির্বাচনী ‘সার’ থেকে গরহাজির কেন? জবাব চাই জেলা প্রশাসনের
এদিকে জানা গেছে—
‘সার’-এর সময় প্রশান্ত উপস্থিত ছিলেন না।
এ নিয়ে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
তবে শুক্রবার তিনি জলপাইগুড়ির নির্বাচন কমিশন অফিসে ‘সার’ সংক্রান্ত বৈঠকে অংশ নেন।

সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited