পূজোর উৎসবের আবহে ফের দক্ষিণ ভারতগামী নতুন স্পেশাল ট্রেন চালুর ঘোষণা দিল দক্ষিণ পূর্ব রেল। বাড়তে থাকা যাত্রীচাপ সামলাতে ২২ অক্টোবরের জন্য শালিমার থেকে বিশাখাপত্তনম পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন চালানো হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই একের পর এক অতিরিক্ত ট্রেন চালুর ঘোষণা করছে দক্ষিণ পূর্ব রেল, যাতে উৎসবের মরশুমে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন।
২২ অক্টোবরের বিশেষ ট্রেন সূচি
দক্ষিণ পূর্ব রেলের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ০৮৫০৭ শালিমার–বিশাখাপত্তনম স্পেশাল ট্রেনটি ২২ অক্টোবর ভোর ৫টা-এ শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়বে। ওই দিনই রাত ৮টা ৫০ মিনিটে বিশাখাপত্তনম স্টেশনে পৌঁছবে ট্রেনটি।
ট্রেনটিতে আধুনিক কোচ থাকবে, যাতে যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করা যায়। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ট্রেন মূলত উৎসব উপলক্ষে যাত্রীদের চাপ সামলাতেই চালু করা হচ্ছে।
দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে—বিশেষ করে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটকে—বাঙালি শ্রমিক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। পুজোর সময়ে তাঁদের বড় একটি অংশ বাড়ি ফেরেন। সেই কারণেই প্রতি বছর এই সময়টায় দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেনগুলিতে টিকিটের চাহিদা আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে।
বাড়তি চাহিদা সামলাতে ট্রেনের মেয়াদও বাড়ল
শুধু নতুন ট্রেন চালুই নয়, চলমান কয়েকটি স্পেশাল ট্রেনের মেয়াদও বাড়িয়েছে দক্ষিণ পূর্ব রেল।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে—
- সাঁতরাগাছি–আজমেঢ় স্পেশাল ট্রেন চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত,
- আজমেঢ়–সাঁতরাগাছি স্পেশাল ট্রেন চলবে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত।
এছাড়া মালদা টাউন–দিঘা স্পেশাল ট্রেন এবং দিঘা–মালদা স্পেশাল ট্রেন প্রতি শনিবার নিয়মিত চলবে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত।
রেল সূত্রে জানা গেছে, টিকিটের চাহিদা এতটাই বেশি যে অনেক ট্রেনের সমস্ত আসন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বুক হয়ে যাচ্ছে। তাই অতিরিক্ত কোচ সংযোজন এবং মেয়াদ বৃদ্ধি—দুই পথেই রেল যাত্রীদের চাপ কমানোর চেষ্টা করছে।
আগে ঘোষিত দক্ষিণ ভারতগামী স্পেশাল ট্রেনগুলো
এর আগে দক্ষিণ ভারতগামী আরও কয়েকটি বিশেষ ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ পূর্ব রেল।
সেগুলোর মধ্যে অন্যতম—
- ০৬০৯৫ এমজিআর চেন্নাই সেন্ট্রাল–সাঁতরাগাছি স্পেশাল ট্রেন: ১৭ অক্টোবর সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে চেন্নাই সেন্ট্রাল থেকে ছাড়ে এবং পরদিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সাঁতরাগাছি পৌঁছে যায়।
- ০৬০৯৬ সাঁতরাগাছি–এমজিআর চেন্নাই সেন্ট্রাল স্পেশাল ট্রেন: ১৮ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে সাঁতরাগাছি থেকে ছেড়ে পরদিন রাত ৮টা ৩০ মিনিটে চেন্নাই পৌঁছেছে।
এই ট্রেনগুলো চালুর পর থেকেই যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। অনেকে আগেভাগেই বুকিং সম্পন্ন করেন, যাতে উৎসবের আগে-পরে যাত্রা নির্বিঘ্ন হয়।
রেলের বার্তা: ‘উৎসবের ভ্রমণ হোক নিশ্চিন্ত’
দক্ষিণ পূর্ব রেলের এক মুখপাত্র বলেন, “উৎসবের সময়ে যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামলাতে আমরা একাধিক উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষ ট্রেন, মেয়াদ বৃদ্ধি, কোচ সংযোজন—সবকিছু মিলিয়ে আমাদের লক্ষ্য যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও জানান, যাত্রীরা যেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা অনুমোদিত কাউন্টার থেকেই টিকিট সংগ্রহ করেন, যাতে প্রতারণার ঝুঁকি এড়ানো যায়।
যাত্রীদের উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশা
শালিমার স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন ঘোষণার পর থেকেই যাত্রীদের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে। অনেকে বলছেন, প্রতিবছর পুজোর সময় টিকিট পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়, তাই এবার অতিরিক্ত ট্রেনের ঘোষণা সত্যিই স্বস্তিদায়ক।
এক যাত্রী বলেন, “আমরা বিশাখাপত্তনমে কাজ করি। বছরে একবারই বাড়ি যাওয়া হয়। এবার স্পেশাল ট্রেন থাকায় নিশ্চিন্তে বুকিং দিতে পারব।”
উৎসবের সময় দক্ষিণ ভারতগামী বাঙালিদের ভ্রমণ যেন নির্বিঘ্ন হয়—সেই লক্ষ্যেই দক্ষিণ পূর্ব রেলের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। একের পর এক বিশেষ ট্রেন চালুর ফলে শুধু যাত্রীদের স্বস্তিই বাড়ছে না, বরং উৎসবের ভ্রমণও হয়ে উঠছে আরও সুশৃঙ্খল ও আনন্দদায়ক।
