একশো দিনের কাজ বা মনরেগা প্রকল্পকে ঘিরে কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নিয়েছে। বকেয়া অর্থ এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দুই সরকারের মধ্যে চলা বিবাদ এখন সুপ্রিম কোর্টের দরজায়। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলার শুনানি হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধে তা স্থগিত রেখে দিওয়ালির ছুটির পর ২৭ অক্টোবর নতুন শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে আদালত।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে হাজির ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে আবেদন জানান, দিওয়ালির ছুটির আগে মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি সম্ভব নয়, তাই ছুটির পর দিন ধার্য করা হোক। আদালত সেই অনুরোধ মেনে ২৭ অক্টোবরের তারিখ নির্ধারণ করে।
এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানায়, কেন্দ্রীয় সরকারকে ১ আগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে মনরেগা প্রকল্পের আওতায় কাজ শুরু করতে হবে। আদালত আরও উল্লেখ করে, দুর্নীতির আশঙ্কা থাকলে কেন্দ্র রাজ্যের উপর নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করতে পারবে, তবে প্রকল্প বন্ধ রাখা যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশের পরও কেন্দ্র কাজ শুরু করেনি, বরং ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায়।
রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল। তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্যের কাছে মনরেগা বাবদ বিপুল টাকা বকেয়া রেখেছে। “রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষদের রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে, অথচ কেন্দ্র তার দায় এড়াতে চাইছে,” বলেন সিবাল।
একই সুরে কথা বলেন রাজ্যের আরেক প্রতিনিধি আইনজীবী মুরলীধর। তাঁর অভিযোগ, “কেন্দ্র কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মানেনি। এটি সরাসরি আদালত অবমাননার শামিল।”
মনরেগা শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, “রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ এই প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল। কাজ বন্ধ থাকায় তাঁদের জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে।”
বিচারপতি বিক্রম নাথ ও সন্দীপ মেহতা সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বলেন, “এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দিওয়ালির ছুটির পর পূর্ণাঙ্গ শুনানিতে যাব।”
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পরিষ্কার করে জানানো হয়নি, তারা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ শুরুর ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেবে। তবে আদালতের পরবর্তী শুনানির দিকে এখন তাকিয়ে রাজ্যের সাধারণ মানুষ ও মনরেগা শ্রমিকরা।
উল্লেখ্য, একশো দিনের কাজ প্রকল্পটি গ্রামীণ দরিদ্রদের জীবিকা সুরক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় প্রকল্প। পশ্চিমবঙ্গে গত দুই বছর ধরে এই প্রকল্পের অর্থ বন্ধ থাকায় বহু শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। আদালতের রায়ের পর তাঁদের আশা, হয়তো এবার আবার খুলবে কর্মসংস্থানের পথ।
