শরৎকালের সূচনা সত্ত্বেও রাজ্যজুড়ে এখনও পুরোপুরি বিদায় নেয়নি বর্ষা। বিপর্যয়ের ছাপ কাটিয়ে যখন উত্তরবঙ্গ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, তখনই নতুন করে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত। ফলে ফের দক্ষিণবঙ্গে সক্রিয় হচ্ছে মৌসুমি বায়ু, আর তার সঙ্গে আসছে বৃষ্টির সম্ভাবনা।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে নতুন ঘূর্ণাবর্ত গঠিত হতে পারে। এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় আগামী তিন থেকে চার দিন বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বঙ্গে ফের হাওয়া বদল শুক্রবার থেকে
আবহবিদদের মতে, শুক্রবার থেকেই বাতাসের গতিপ্রকৃতিতে পরিবর্তন আসবে। ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়বে এবং দক্ষিণবঙ্গে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাবে।
এই প্রভাবে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কলকাতায় আগামী শনিবার (১১ অক্টোবর) পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বজ্রপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আপাতত না থাকলেও বজ্রঝড়ের কারণে স্থানীয়ভাবে সাময়িক বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাই কৃষক ও সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে ধীরে ধীরে কমছে বৃষ্টি
উত্তরবঙ্গের মানুষ যেভাবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অতিবৃষ্টির প্রভাব ও নদীভাঙন মোকাবিলা করে চলেছেন, তাতে আপাতত কিছুটা স্বস্তির খবর দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। বৃহস্পতিবার থেকে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির তীব্রতা কমতে শুরু করবে।
মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে দু’-এক পশলা বৃষ্টি হতে পারে। তবে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে আবহাওয়ার সার্বিক উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। আগামী সপ্তাহের মধ্যে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ এলাকায় আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে পরিষ্কার হবে।
দক্ষিণবঙ্গের জন্য নতুন সতর্কতা
দক্ষিণবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি চলবে অন্তত শনিবার পর্যন্ত। রোববার ও সোমবার বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।
সপ্তাহান্তে দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যাবে, ফলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও হ্রাস পাবে। পরবর্তী সপ্তাহের শুরুতে আবহাওয়া ধীরে ধীরে শুষ্ক হয়ে উঠবে বলে পূর্বাভাস।
এক আবহবিদ জানিয়েছেন,
“ঘূর্ণাবর্তটি খুব গভীর না-ও হতে পারে। তবে এর কারণে দক্ষিণবঙ্গে কয়েক দিনের জন্য আর্দ্রতা ও বজ্রঝড়ের প্রভাব বাড়বে। এরপরই মৌসুমি বায়ুর প্রভাব হ্রাস পাবে।”
কবে বিদায় নেবে বর্ষা?
আবহাওয়াবিদদের মতে, ১৪ অক্টোবর নাগাদ উত্তরবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায় নিতে পারে। দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি সরে যেতে পারে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে। অর্থাৎ, দুর্গাপূজার আগে বৃষ্টি কিছুটা হলেও পিছু হটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্ষা বিদায়ের পর থেকেই রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমবে, আর্দ্রতা কমবে, এবং দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য বাড়বে—যা শরতের স্পষ্ট বার্তা নিয়ে আসবে।
কলকাতার বর্তমান আবহাওয়া
কলকাতায় বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ০.৭ ডিগ্রি কম। আজ (বৃহস্পতিবার) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বাধিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৮৬ শতাংশ—ফলে গুমোট আবহাওয়া থাকবে দিনভর।
আবহবিদরা জানাচ্ছেন, সপ্তাহান্তে সামান্য বৃষ্টি হলেও পরবর্তী সপ্তাহে আবহাওয়া পরিষ্কার হবে এবং সকালের দিকে হালকা ঠান্ডা ভাব অনুভূত হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরের নতুন ঘূর্ণাবর্ত রাজ্যে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে না বলেই আশা আবহবিদদের। তবে মৌসুমি বায়ুর শেষ ধাপের এই ওঠানামা রাজ্যজুড়ে বজ্রঝড় ও সামান্য বৃষ্টির কারণ হতে পারে।
উত্তরবঙ্গ পাবে স্বস্তির নিশ্বাস, আর দক্ষিণবঙ্গের আকাশে মিলবে শরতের আভাস—এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের আবহাওয়া মানচিত্র।

সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited