কলকাতার আকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রাত বাড়তেই বৃষ্টি তীব্র হবে। কিন্তু তাতে দমে থাকেনি উৎসবের আবহ। মহানবমীর সন্ধ্যায় কালীঘাট মন্দিরে আরতি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতে কাঁসর বাজিয়ে মায়ের আরাধনায় মগ্ন হলেন তিনি। প্রতি বছরই এই দৃশ্য দেখা যায়, আর এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
পুরোহিতের পাশে বসেই আরতি করলেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে আবেগে আপ্লুত হন। এবারের দুর্গাপূজোয় শুরু থেকেই তাঁর হাত ধরেই উদ্বোধন হয়েছিল একাধিক পুজো মণ্ডপের। নবমীর রাতেও দেখা গেল সেই একই ভক্তিময় ছবি।
পুজোর আবহ ও উৎসবের শেষ দিন
মহানবমী মানেই বিদায়ের সুর। রাত পোহালেই আসছে দশমী, দেবীর বিদায়ের দিন। তাই সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় জমেছে প্রতিমা দর্শনার্থীদের। চালতাবাগানে পরিবারকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, প্রতিটি পুজোমণ্ডপেই আজ ছিল মানুষের ঢল।
বেলুড় মঠেও অনুষ্ঠিত হয়েছে নবমীর বিশেষ পূজা। পুজোর তিথি মেনে দেবীর আরাধনায় অংশ নেন হাজার হাজার ভক্ত। সকলের মনেই তখন একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে বিদায়ের বিষণ্নতা।
আবহাওয়ার প্রভাব ও নিম্নচাপের অগ্রগতি
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ নবমীর বিকেলেই শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অতি গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে চলেছে।
আঞ্চলিক অধিকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রবল শক্তিশালী এই নিম্নচাপ শুক্রবার ভোরে দক্ষিণ ওড়িশার স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। বিশেষ করে গোপালপুর থেকে পারাদ্বীপের মাঝামাঝি এলাকায় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে নিম্নচাপটি অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে ৪০০ কিলোমিটার এবং পারাদ্বীপ থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
উৎসবের মাঝেই আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা
পুজোর শুরু থেকেই এ বছর দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। যদিও ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত তেমন বড় বৃষ্টি হয়নি। কোথাও কোথাও কয়েক পশলা ভারী বৃষ্টি হলেও, নাগাড়ে বৃষ্টি হয়নি। তাই মানুষের প্রতিমা দর্শন নির্বিঘ্ন ছিল।
তবে নবমীর সন্ধ্যায় আবহাওয়ার রূপ বদলেছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা ও নিম্নচাপের ভ্রুকুটি পুজোর আনন্দে খানিকটা শঙ্কা তৈরি করেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, দেবীর বিদায়ের দিনেই হয়তো আবহাওয়া বিঘ্ন ঘটাবে।
মানুষের ভিড় ও আবেগ
তবুও উৎসবের উচ্ছ্বাসে কোনো ভাটা পড়েনি। শহরের প্রায় প্রতিটি বড় পুজো মণ্ডপেই নবমীর দিনে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে মানুষ ঘুরেছেন এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে।
একজন দর্শনার্থী বলছিলেন, “বছরে একবারই আসে এই আনন্দ। মা বিদায় নেবেন ভেবেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই শেষ দিনটা পুরোদমে উপভোগ করতে চাই। বৃষ্টি আমাদের আটকাতে পারবে না।”
বিদায়ের সুর
অতীতের মতো এবারও শারদোৎসব কলকাতাকে রাঙিয়ে তুলেছে আনন্দ, ভক্তি ও আবেগে। তবে নিম্নচাপের ভ্রুকুটি আর প্রবল বৃষ্টির শঙ্কা উৎসবের শেষ প্রহরে এনে দিয়েছে কিছুটা দুশ্চিন্তা। রাত পোহালেই দেবীর বিদায়। তাই নবমীর রাত যেন শহরবাসীর কাছে হয়ে উঠেছে আবেগঘন ও স্মরণীয়।
