Art এবং Fashion সব সময়ই একে অপরের হাত ধরে চলে। যুগের পর যুগ ধরে শিল্পীরা তাদের ক্যানভাসে যেমন সমসাময়িক ট্রেন্ড তুলে ধরেছেন, ঠিক তেমনি বড় বড় ডিজাইনাররাও ইন্সপিরেশন নিয়েছেন বিখ্যাত সব পেইন্টিং থেকে।

আর্ট হিস্ট্রির এমন কিছু আইকনিক আউটফিট আছে যা শত শত বছর পরেও ফ্যাশন দুনিয়ায় রাজত্ব করছে।

চলুন জেনে নেই আর্ট হিস্ট্রির ৬টি সবচেয়ে আইকনিক এবং স্টাইলিশ মোমেন্ট সম্পর্কে, যা আজও আমাদের মুগ্ধ করে।
১. “Girl with a Pearl Earring” – Johannes Vermeer (১৬৬৫)
Vermeer-এর এই মাস্টারপিসটি হয়তো কোনো নির্দিষ্ট মানুষের পোর্ট্রেট নয়, বরং এটি ছিল একটি “Tronie”—যা মূলত চরিত্র বা এক্সপ্রেশন স্টাডি করার জন্য আঁকা হতো। মেয়েটির পরনে থাকা হলুদ জ্যাকেটটি সে সময়ের সাধারণ পোশাক হলেও, তার মাথায় বাঁধা নীল-হলুদ স্কার্ফটি তাকে দিয়েছিল এক অনন্য “Exotic” লুক।

তবে এই ছবির প্রধান আকর্ষণ হলো সেই বিশাল মুক্তার দুলটি। সে যুগে ন্যাচারাল পার্ল ছিল অত্যন্ত দুর্লভ এবং দামী। তাই ধারণা করা হয়, এটি হয়তো পেইন্টেড গ্লাস দিয়ে তৈরি কোনো “ফেক পার্ল” ছিল, যা Vermeer-এর পেইন্টিংয়ে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২. “The Arnolfini Portrait” – Jan van Eyck (১৪৩৪)
Jan van Eyck-এর এই বিখ্যাত পেইন্টিংটি ফ্যাশন হিস্ট্রির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ছবিতে দেখা যাওয়া দম্পতি ছিলেন ধনী ব্যবসায়ী, আর তাদের পোশাকই ছিল তাদের স্ট্যাটাস সিম্বল। ভদ্রমহিলার পরনে ছিল দামী উলের তৈরি সবুজ রঙের একটি গাউন, যার নেকলাইন এবং স্লিভে ছিল ফার (fur) এর কাজ। ১৫ শতকে এমন কাপড় শুধুমাত্র অতি ধনীদের জন্যই বরাদ্দ ছিল।
অনেকে মনে করেন ভদ্রমহিলা প্রেগন্যান্ট ছিলেন, কিন্তু এটি ভুল ধারণা। পেটের কাছে কাপড়ের এই ভলিউম এবং লম্বা ট্রেইন (train) আসলে তৎকালীন ফ্যাশন এবং আভিজাত্যের প্রতীক ছিল, যা বুঝিয়ে দিতো তারা কতটা দামী কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।
৩. “Ophelia” – John Everett Millais (১৮৫১-৫২)
শেক্সপিয়রের ট্র্যাজিক হিরোইন ‘ওফেলিয়া’-র এই ছবিটি পপ কালচারের অন্যতম আইকনিক ইমেজ। ছবিতে ওফেলিয়া যখন পানিতে ডুবে যাচ্ছিলেন, তখন তার পরনে ছিল একটি ভলুমিনাস সিলভার এমব্রয়ডারি করা ড্রেস।

মজার ব্যাপার হলো, এই ছবির জন্য মডেল এলিজাবেথ সিডালকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠান্ডা পানির বাথটাবে শুয়ে পোজ দিতে হয়েছিল। আর শিল্পী Millais এই ড্রেসটি কিনেছিলেন একটি সেকেন্ড হ্যান্ড শপ থেকে মাত্র ৪ পাউন্ডে (আজকের দিনে যা প্রায় $৫৮০)। পুরাতন এবং জরাজীর্ণ হলেও, ড্রেসটির ডিটেলিং ছবিটিকে জীবন্ত করে তুলেছিল।
৪. “The Portrait of Anne Boleyn” – অজানা শিল্পী (১৫৫০)
হেনরি অষ্টম-এর দ্বিতীয় স্ত্রী অ্যান বোলিন-এর এই পোর্ট্রেটটি ফ্যাশন দুনিয়ায় আজও প্রাসঙ্গিক। যদিও শিল্পী কে ছিলেন তা জানা যায়নি এবং অ্যান বোলিনের জীবদ্দশার সব ছবি রাজা ধ্বংস করে ফেলেছিলেন, তবুও এই ছবিটি টিকে আছে।

এই ছবির সবচেয়ে স্টাইলিশ এলিমেন্ট হলো তার গলার পার্ল নেকলেসটি, যাতে ‘B’ অক্ষরটি ঝুলানো ছিল। পরবর্তীতে ব্যালেন্সিয়াগা বা টিফানির মতো ব্র্যান্ডগুলো এই নেকলেস থেকে ইন্সপিরেশন নিয়ে অনেক জুয়েলারি ডিজাইন করেছে। এটি ছিল সত্যিকারের এক বোল্ড ফ্যাশন স্টেটমেন্ট।
৫. “Portrait of Madame X” – John Singer Sargent (১৮৮৪)
জন সিঙ্গার সার্জেন্টের এই পেইন্টিংটি যখন প্রথম প্রদর্শিত হয়, তখন প্যারিসে রীতিমতো স্ক্যান্ডাল তৈরি হয়েছিল। ছবির মডেল ভার্জিনি গত্রেউ ছিলেন একজন সেশালাইট। সার্জেন্ট তাকে একটি কালো হার্ট-শেপড বডিস (heart-shaped bodice) এর ড্রেসে এঁকেছিলেন।
অরিজিনাল পেইন্টিংয়ে ড্রেসের একটি স্ট্রপ কাঁধ থেকে পড়ে যাচ্ছিল, যা তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজ মেনে নিতে পারেনি। পরে সার্জেন্ট সেটি ঠিক করে দিলেও, এই কালো ড্রেসটি ফ্যাশনের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। এটি প্রমাণ করে যে, “Little Black Dress” সব যুগেই ক্লাসিক।
৬. “Ellen Terry as Lady Macbeth” – John Singer Sargent (১৮৮৯)
লন্ডনের বিখ্যাত শেক্সপিয়রিয়ান অভিনেত্রী এলেন টেরির এই লুকটি ছিল ড্রামাটিক এবং আইকনিক। লেডি ম্যাকবেথের চরিত্রে তার এই ড্রেসটি তৈরি করা হয়েছিল সত্যিকারের বিটল উইংস (beetle wings) বা পোকার পাখা দিয়ে!
ইন্ডিয়ান কালচার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ইরিডিসেন্ট (iridescent) বা ঝলমলে সবুজ পাখাগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, যা স্টেজের আলোয় জ্বলে উঠতো। ড্রেসটি এমনভাবে বোনা হয়েছিল যা দেখতে অনেকটা চেইন মেইলের (chain mail) মতো মনে হতো। এটি ছিল ভিক্টোরিয়ান যুগের অন্যতম সাহসী এবং এক্সপেন্সিভ একটি কস্টিউম ডিজাইন।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited