জামালপুরে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে সরকারের এই উদ্যোগ জেলার কৃষক সমাজে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলায় ৩৮ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এই প্রণোদনা পাবেন। এর মাধ্যমে কৃষকরা আসন্ন রবি মৌসুমে গম, সরিষা, চিনা বাদাম, পেঁয়াজ ও মসুর চাষে উৎসাহিত হবেন বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
এক বিঘা জমিতে বিনামূল্যে চাষ সহায়তা
প্রতিটি কৃষক এক বিঘা জমিতে যেকোনো একটি রবি ফসল চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার পাবেন।
বিভাগীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
- গম চাষের জন্য ২ হাজার কৃষক,
- সরিষার জন্য ৩৫ হাজার কৃষক,
- চিনা বাদামের জন্য ৪০০ কৃষক,
- শীতকালীন পেঁয়াজের জন্য ৩০০ কৃষক এবং
- মসুর ডালের জন্য ৩০০ কৃষক প্রণোদনা পাচ্ছেন।
এই কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি ফসলভিত্তিক কৃষক নির্দিষ্ট পরিমাণ বীজ ও সার বিনামূল্যে পাবেন।
কে কী পরিমাণ পাবেন
বিভাগীয় দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী—
- গম চাষের জন্য: ২০ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার।
- সরিষা চাষের জন্য: ১ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার।
- চিনা বাদাম চাষের জন্য: ১০ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার।
- পেঁয়াজ চাষের জন্য: ১ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার।
- মসুর চাষের জন্য: ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার।
এই উপকরণগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কৃষকদের কাছে উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের উদ্দেশ্য: উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষক সহায়তা
জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলম শরীফ খান বলেন, “সরকারের লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তার মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকের ব্যয় কমানো। এই প্রণোদনার ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পাবেন এবং চাষে আগ্রহী হবেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই সপ্তাহের মধ্যেই প্রণোদনা বিতরণের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এর ফলে রবি মৌসুমে জেলার মাঠে চাষাবাদ আরও সক্রিয় হবে।”
কৃষকদের মুখে স্বস্তির হাসি
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রণোদনা পাওয়া কৃষকরা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
মাদারগঞ্জ উপজেলার কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, “সার ও বীজের দাম এখন অনেক বেশি। সরকারের এই সহায়তা না থাকলে এ বছর সরিষা চাষ করা কঠিন হয়ে যেত। এখন প্রণোদনা পাওয়ায় আমরা স্বস্তিতে আছি।”
ইসলামপুরের আরেক কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিনামূল্যের বীজ ও সার পাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে যাবে। আমরা আশা করছি, এবারে ভালো ফলন হবে।”
কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকি ও সচেতনতা কর্মসূচি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রণোদনার পাশাপাশি কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ ও সার ব্যবহারের বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যেক উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তারা প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করছেন। একইসঙ্গে তারা কৃষকদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে থেকে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
রবি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা
জামালপুরে এ বছর রবি মৌসুমে সরিষা, গম ও ডাল জাতীয় ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আগের বছরের চেয়ে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এই প্রণোদনা কৃষকদের উৎপাদনমুখী করে তুলবে এবং দেশের তেলবীজ ও ডাল আমদানিনির্ভরতা কিছুটা কমাবে।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর আশা করছে, এই প্রণোদনার ফলে জেলার সার্বিক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং খাদ্যনিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় হবে।
কৃষিতে সরকারের ধারাবাহিক সহায়তা
সরকার গত কয়েক বছরে কৃষকদের উৎপাদন সহায়তা হিসেবে বীজ, সার, কৃষিযন্ত্রপাতি ও নগদ অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন প্রণোদনা চালু রেখেছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় টেকসই কৃষি পদ্ধতি প্রসারে এই উদ্যোগগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জামালপুরের এই প্রণোদনা কর্মসূচি তারই অংশ, যা বাস্তবায়িত হলে রবি মৌসুমে জেলার কৃষিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited