দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষকদের অবদান অনন্য—তাঁদের বাদ দিয়ে কোনোভাবেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার খাদ্য বিষয়ক উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, “আমাদের কৃষকরাই প্রকৃত অর্থে দেশের খাদ্যযুদ্ধে সম্মুখসারির যোদ্ধা। তাঁদের ঘামে উৎপাদিত ধান-চালেই দেশের কোটি মানুষের আহার নির্বাহ হয়।”
সোমবার দুপুরে রাজশাহী সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে ‘বিভাগীয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
খাদ্য উপদেষ্টা জানান, সরকার ইতিমধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মেয়াদ পাঁচ মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করেছে। নতুন করে আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেও এই কর্মসূচি চলবে। “আগে ৫০ লাখ পরিবারকে এ সুবিধার আওতায় আনা হলেও এবার তা বাড়িয়ে ৫৫ লাখ পরিবারে উন্নীত করা হয়েছে। তারা প্রতি কেজি চাল মাত্র ১৫ টাকায় ৩০ কেজি করে পাচ্ছেন,” বলেন আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যের হার বিবেচনায় পরিবারসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। “খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সরকারের সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের অন্যতম শক্তিশালী উদ্যোগ। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ন্যায্যমূল্যে খাদ্য পেয়ে উপকৃত হচ্ছে,” বলেন তিনি।
রাজশাহীতে ভাসমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এ অঞ্চলে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) কর্মসূচির আওতায় চাল ও আটা বিক্রির পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়েছে। “আমরা আশা করছি, এবারের আমন মৌসুমে আগের চেয়ে ভালো ফলন হবে,” যোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্য উপদেষ্টা জানান, সরকারের হাতে বর্তমানে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। “খাদ্য মজুত এখন অত্যন্ত সন্তোষজনক পর্যায়ে। তারপরও প্রয়োজনে সর্বোচ্চ চার লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত আমদানি করতে হতে পারে,” তিনি বলেন।
তবে তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, “যদি শুধু মানুষই খাদ্যের ভোক্তা হতো, তাহলে আমদানির দরকার হতো না। এখন গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিও খাদ্যের বড় ভোক্তা। সুতরাং উৎপাদন ও মজুতের ভারসাম্য বজায় রাখতে কিছু আমদানি প্রয়োজন।”
বর্তমানে খাদ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সরকার তা পর্যবেক্ষণ করছে। ভবিষ্যতেও বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।”
উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা জানি, কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সে বিবেচনায় গত বোরো মৌসুমে সরকার আগের বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি চার টাকা বেশি দিয়ে ধান ক্রয় করেছে। এবারও কৃষি মন্ত্রণালয় যে দাম প্রস্তাব করবে, খরচ ও লাভ উভয় দিক বিবেচনায় এনে সেই অনুযায়ী আমনের দাম নির্ধারণ করা হবে।”
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “কৃষকের ন্যায্য লাভ নিশ্চিত করেই দাম নির্ধারণ করা হবে। কৃষকেরা যাতে উৎসাহিত হয়, সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।”
রাজশাহী অঞ্চলে নিম্নমানের চাল বিতরণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “রাজশাহীতে সরবরাহ করা চাল এখানকার স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত চাল। কোনো জায়গায় নিম্নমানের চাল সরবরাহ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতি বা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
এর আগে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা মাঠ প্রশাসন ও খাদ্য কর্মকর্তাদের ওএমএসসহ অন্যান্য কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে তদারকির নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে খাদ্য গুদামে মানসম্মত ধান-চাল সরবরাহের ওপর জোর দেন এবং মিল মালিকদের সঙ্গে স্বচ্ছ চুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সভায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ূন কবীর, বিভাগের সব জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সভায় বক্তারা দেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনা আরও গতিশীল ও কৃষকবান্ধব করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited