আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকারের শেষ বাজেট অধিবেশন চলছে। গত দুই বছর করোনার কারণে বাজেট অধিবেশন অনেক সংক্ষিপ্ত হলেও এবার অধিবেশনটি বেশ বড় হচ্ছে।
এবারের অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতি অনেক বেশি। সদস্যরা অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি মনোনয়ন নিশ্চিতের জন্য এই সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছেন।
গত কয়েকদিন দেখা গেছে, সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অধিবেশন কক্ষেই সংসদ সদস্যরা এসে দেখা করছেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদের থাকাকালীন সময়ে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করছেন এমপিরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, নির্বাচনের আগে হয়তো আর এত বড় অধিবেশন হবে না। এক অর্থে এটাই বড় অধিবেশন। অধিবেশনকে ঘিরে সব সময় একটি উৎসব তৈরি হয়। তবে এবার এর সঙ্গে মনোনয়ন বিষয়টিও যুক্ত। শুধু অধিবেশন কক্ষেই নয় এমপিরা সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও আসা-যাওয়া করছেন।
আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এর মধ্যে অনেকেই গ্রীন সিগনাল পেয়েছেন। আবার গত কয়েক মাসে অনেককে সতর্ক করা হয়েছে। অনেকেই বুঝতে পারছেন মনোনয়ন পেতে সমস্যা হতে পারে তাই তারাও ব্যস্ত নৌকার টিকিট নিতে।
গত এক সপ্তাহে সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ কয়েকটি এলাকার এমপিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদে একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি নৌকার টিকিট নিয়ে বেশি কথা বলছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি। আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায়। ফলে তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম। এরমধ্যে টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।
সংসদের বাইরে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না এমন ঘোষণা দিয়ে আসছে এবং তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার পক্ষে যারা বাধা হবে তাদের জন্য ভিসা নীতি প্রণয়ন করেছে।
এসব পরিস্থিতিতে সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার সরকারের অধীনেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করবেন।
আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, মনোনয়নের বাছ-বিচার শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে শতাধিক এমপি রয়েছেন যারা মনোনয়ন পাবেন এমন সবুজ সংকেত পেয়েছেন। এলাকায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের জন্য এবার নৌকার টিকিট পাওয়া সহজ হবে না।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের এই সদস্য আরও বলেন, এবারের সংসদ অধিবেশনে এমপিরা অনেক বেশি সরব। সংসদ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা রয়েছে অনেকের মধ্যে। গত চার বছরে যারা এলাকার বিষয় নিয়ে কথা বলেননি তারাও এবারের অধিবেশনে নির্বাচনী এলাকার বিষয় নিয়ে কথা বলছেন।
জানা গেছে, সংসদ নেতা অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত থাকবেন এই সময়টাতেই অনেকেই বাজেট এর উপরে আলোচনার সময়ের অনুরোধ করেছেন।
শুধু সংসদ নেতাই নয়, দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের কাছে এমপিরা ধরনা দিচ্ছেন। যারা এখন এমপি আছেন সবাই নৌকার টিকিট চান।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, নেত্রী বলেই দিয়েছেন নির্বাচনী এলাকায় যেতে। জনগণের সমর্থন নিতে। নির্বাচনের যেহেতু সময় বেশি নেই, তাই এখন তো মনোনয়নের বিষয়টি আসবে। বাজেট অধিবেশনে সদস্যরা এসেছেন। নিজের মনোনয়ন নিয়ে তো কথা বলবেনই।