ডেস্ক রিপোর্ট:: দেশটা কারও বাবার নয় মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।তিনি বলেন, সবাই মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশটাকে আমরা স্বাধীন করেছি; কিন্তু সেই দেশে আজকে কোনো কথা বলার অধিকার নেই, নিরাপত্তা নেই।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচি শুরুর আগে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, আসুন না মাঠে। গদিটা ছেড়ে আসেন। পুলিশ-প্রশাসন ছেড়ে আসেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। তারপর দেখেন কার কত শক্তি।
সরকারকে হুঁশিয়ার করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মান থাকতেই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। নইলে পালানোর পথও পাবেন না। এখন তো আবার আমেরিকা আপনাদের পালানোর পথও বন্ধ করে দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে এ সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখেছিল। এখন ঘরে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে সরকার। আমাদের এমন কোনো নেতা নেই, যার বিরুদ্ধে একের অধিক মামলা নেই।
জনগণের পকেট কাটাই সরকারের একমাত্র কাজ মন্তব্য করে তিনি বলেন, গ্রামে-বাজারে দেখেন না, পকেট কাটা হয়। লোকে তখন বলে- ধর ধর পকেটমার। এখন সময় আসছে আসল পকেটমারকে ধরার। এমন একটা জিনিস নেই যে, সেখান থেকে সরকার পকেট কাটছে না। মোবাইল থেকে তারা পকেট কেটে নেয়। বিদ্যুতের কার্ডে টাকা ঢোকালে দেখবেন ৩শ টাকা নেই, কেটে নিয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এক বছরে আমাদের ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সরকার এখন বলে কয়লা নেই, গ্যাস নেই। কেন ভাই? টাকা তো আগে নিয়ে আসেন। টাকা কই গেল? সব তো পাচার করেছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভিসানীতিতে সরকার বড় বেকায়দায় পড়ে গেছে। তারা পাচার করা টাকা এখন আবার দেশে আনছেন। সেই টাকায় আড়াই পার্সেন্ট ইনসেনটিভ দিতে হচ্ছে। এখন টাকা পাচারকারীদের পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছে। চুরি করেও এ সরকারের আমলে পুরস্কার পাওয়া যায়। তবে সরকারের গলাবাজি শেষ হয়নি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। বরিশালের প্রার্থী চরমোনাই পির সাহেবের ছেলে মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম একজন আলেম। তাকেও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। আবার বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, ১০ জনের কাছে দেশের বিদ্যুত খাত জিম্মি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। সিরাজুল আলম খানের অবদানকেও অস্বীকার করা হচ্ছে। শেষ সময়ে একটা শোক বাণী পর্যন্ত দেয়নি আওয়ামী লীগ।
গোপীবাগ সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে পদযাত্রা ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মোড়, টিকাটুলী, রাজধানী মার্কেট, স্বামীবাগ, দয়াগঞ্জ, ধোলাইখাল মোড় হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়ে এসে শেষ হয়। হাজারও নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে পদযাত্রায় অংশ নেন।
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন- বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, কাজী আবুল বাশার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহানগর দক্ষিণের নবী উল্লাহ নবী, মোশাররফ হোসেন খোকন, তানভীর আহমেদ রবিন, মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সুমন ভুঁইয়া, যুবদলের এনামুল হক এনাম প্রমুখ।
একই সময়ে ঢাকা উত্তরের উদ্যোগে মহাখালী থেকে আরেকটি পদযাত্রা হয়। এটি নাবিস্কো মোড়, সাতরাস্তা মোড়, এফডিসি সড়ক দিয়ে কারওয়ানবাজারে হোটেল সোনারগাঁওয়ের কাছে গিয়ে শেষ হয়।
এ পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে গেছে, রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। তাদের নির্ভরশীলতা পুলিশ, র্যাব ও আনসারের একাংশের ওপর। এই একাংশ এই অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বেআইনি কাজ করছেন। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ও সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। এই একাংশের কাছে অনুরোধ এই পথ থেকে সরে আসেন। দেশের জনগণ জেগেছে।
পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেন- বিএনপির আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, কামরুজ্জামান রতন, আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু, ফখরুল ইসলাম রবিন, রেজওয়ানুল হক রিয়াজ প্রমুখ।