সিলেট প্রতিনিধি: আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মহানগর সংলগ্ন (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) সংসদীয় এই আসনের সংসদ সদস্য শুক্র ও শনিবার নৌকার কাণ্ডারি মো.আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে প্রচার চালান এবং পরে সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে আপলোড করেন।
দক্ষিণ সুরমার কায়েস্থরাইল এলাকায় এবং দলীয় কর্মীসভায় নৌকার পক্ষে প্রচার চালানোর কথা বললেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাংসদ হাবিব।
এ নিয়ে সিলেটে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে নির্বাচন কমিশন বলছে, বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু না হলেও নগরীতে লেগেছে ভোটের হাওয়া।
সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তার নির্বাচনী এলাকার ছয়টি ওয়ার্ড মহানগরের অন্তর্ভুক্ত।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনায় প্রচারের সুবিধার জন্য নগরকে যে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে কমিটি করা হয়েছে, তার পূর্বাঞ্চল কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন হাবিবুর রহমান।
শুক্রবার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণ সুরমার কায়েস্থরাইল জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের কাছে সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন এই সংসদ সদস্য। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় যোগ দিয়েও তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট চান।
সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়ররা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।
প্রচার শুরুর আগেই এভাবে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্যের এ আচরণ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি করবে। তাছাড়া প্রচারকালেও বিধিমালা অনুযায়ী কোনোভাবেই একজন সংসদ সদস্য প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেন না। এটা নীতি ও নৈতিকতাবহির্ভূত কাজ।
সুজনের সভাপতি মনে করেন, নির্বাচন কমিশনও সংসদ সদস্যের এমন প্রচারণার দায় এড়াতে পারে না।
তবে সংসদ সদস্যের প্রচার চালানোর বিষয়টি নজরে পড়েনি নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের।
সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের বলেন, সংসদ সদস্যদের প্রচার চালানোর বিষয়টি আমাদের নজরে পড়েনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সবার কাছেই নির্বাচনী আচরণবিধি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা সবাইকে তা মেনে চলতে অনুরোধ জানান।
দলীয় প্রার্থীর পক্ষে হাবিবুর রহমানের ভোট চাওয়ার বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।

এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোয়ন পাওয়া মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।
তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচনী আচারণবিধি লঙ্ঘন করিনি। সিটিতে আগামী ২১ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। এটি আমার নির্বাচনী এলাকা, আমি তো এখানে থাকবই। আমি সাধারণ মানুষের কাছে গিয়েছি, এতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু ঘটেনি।
ফেসবুকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি হাবিবুর রহমান বলেন, ফেসবুক হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সেখানে এ বিষয়ে কথা বলা যেতেই পারে।২১ তারিখ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেবেন; তার আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো কোনো কাজ আমি করিনি।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited