জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন যে তারিখই নির্ধারণ করুক, সরকার সেই অনুযায়ী নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত—এ কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লটজ সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
নির্বাচন ঘিরে পূর্ণ প্রস্তুতি
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, নির্বাচন কমিশনই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। তবে তারিখ যাই হোক, মাঠ পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন,
“নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে—এটাই আমাদের আশা। তারিখ নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। যে তারিখই নির্ধারণ করা হোক না কেন, আমরা নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে প্রস্তুত আছি।”
উপদেষ্টা জানান, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পরিকল্পনায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার সমন্বয়ে বহুমাত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী মোতায়েন, রুট মার্চ, স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল সক্রিয় রাখা হবে।
শেখ হাসিনার রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
বৈঠকে জার্মান রাষ্ট্রদূত সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবেশ, বিশেষ করে শেখ হাসিনার রায়-পরবর্তী জনমত ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই।
তিনি বলেন,
“ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সারাদেশে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
উপদেষ্টা আরও জানান, এ ধরনের পরিস্থিতিতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক মনিটরিংও জোরদার করা হয়েছে।
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
অপরাধচিত্র নিয়ে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের অপরাধের হার বেড়ে যায়নি বরং তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তার ভাষায়,
“অপরাধ বাড়ছে না—এটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত সমন্বয়ে কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন,
“মানুষ এখন স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারছে, যা বিগত ১৫ বছরে সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকার গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে।”
বন্দি প্রত্যর্পণ, সাইবার অপরাধ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
বৈঠকে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, অনলাইন জালিয়াতি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,
“জার্মানি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। অর্থনীতি, প্রযুক্তি, অভিবাসন, নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই জার্মানির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন,
“দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে আমরা নানামুখী উদ্যোগে কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সহযোগিতাও এর অংশ।”
উপস্থিতি ও বৈঠকের পরিবেশ
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন আনজা কারস্টেনসহ উভয় পক্ষের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং ভবিষ্যতে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হন।
নির্বাচন ঘিরে সরকারের বার্তা
বৈঠকের শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আবারও পুনর্ব্যক্ত করেন যে, নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ।
তিনি বলেন,
“দেশের জনগণ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে সতর্ক অবস্থানে থাকবে।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited