ঘানার রাজধানী আক্রায় সেনাবাহিনীতে নতুন সদস্য নিয়োগের বাছাই কার্যক্রম চলাকালে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী।
বুধবার ভোরে ঘটে যাওয়া এ ঘটনাটি পশ্চিম আফ্রিকার স্বর্ণসমৃদ্ধ দেশ ঘানায় তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনায় ছয়জন চাকরিপ্রার্থী প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”
ঘটনার সূত্রপাত: নিরাপত্তা ভেঙে হুড়োহুড়ি
সেনাবাহিনীর বিবৃতি অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ঘটনাটি ঘটে। রাজধানীর আল-ওয়াক স্পোর্টস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল সৈন্য নিয়োগের বাছাই কার্যক্রম।
সকাল সকাল হাজারো তরুণ চাকরিপ্রার্থী স্টেডিয়ামের বাইরে জমায়েত হন। নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন।
সেই সময় হুড়োহুড়ি ও ঠেলাঠেলির মধ্যে কয়েকজন পড়ে গেলে পদদলিত হয়ে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। উপস্থিত নিরাপত্তা সদস্যরা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও ততক্ষণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে যায়।
ঘানার সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, “নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও, অতিরিক্ত ভিড় ও প্রার্থীদের অস্থিরতার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত এই দুর্ঘটনা ঘটে।”
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোররাত থেকেই প্রার্থীরা লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেন। কিন্তু সকাল গড়াতেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেউ কেউ দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা ও ভিড়ের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এক প্রার্থী স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন,
“আমরা সারা রাত ধরে অপেক্ষা করছিলাম। সকাল হতেই সবাই গেটের দিকে দৌড়াতে শুরু করে। হঠাৎ সামনে কেউ পড়ে গেলে সবাই একে অপরের ওপর পড়ে যায়—চোখের সামনে মানুষ মারা যেতে দেখি।”
ঘানার সেনাবাহিনীর বিবৃতি ও তদন্তের ঘোষণা
ঘানার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ, নিরাপত্তা ঘাটতি ও দায়িত্বে অবহেলার দিকগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“ঘানার সশস্ত্র বাহিনী নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং আহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
তদন্ত কমিটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানানো হয়েছে।
পটভূমি: বেকারত্ব ও সেনা পেশার আকর্ষণ
ঘানায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় সেনাবাহিনী ও পুলিশে চাকরি পাওয়া তরুণদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
সরকারি বেতন, সামাজিক মর্যাদা ও স্থায়ী চাকরির নিশ্চয়তার কারণে এসব নিয়োগ পরীক্ষায় সাধারণত হাজারো প্রার্থী অংশ নেন।
কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা না থাকলে প্রায়ই এমন ভিড়জনিত দুর্ঘটনা ঘটে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘানার সামরিক বাহিনীতে নিয়োগের এ ধরনের জনসমাগম দেশের তরুণদের কর্মসংস্থানের সংকটকেও প্রতিফলিত করে।
ঘানার সেনাবাহিনীর বহুমুখী ভূমিকা
ঘানার সেনাবাহিনী শুধু সীমান্ত বা প্রতিরক্ষা দায়িত্বেই সীমাবদ্ধ নয়।
দেশটির স্বর্ণসমৃদ্ধ অঞ্চলে অবৈধ খনির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণেও তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
তাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাহিনীতে কর্মীসংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার অংশ হিসেবে এবার এই বাছাই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।
তবে দুর্ঘটনার কারণে নিয়োগ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে বলে সামরিক সূত্রে জানা গেছে।
জনমনে ক্ষোভ ও শোক
ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-অ্যাডো এক বিবৃতিতে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে লিখেছেন,
“সরকারের অবহেলা ও পরিকল্পনার অভাবই এ মৃত্যুর জন্য দায়ী।”
ঘানার মানবাধিকার কমিশন বলেছে, এ ধরনের ঘটনায় দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
তারা বলেছে, ভবিষ্যতে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে উন্নত পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited