বাংলাদেশের ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়কে তুলে ধরতে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ট্রায়াল অব জুলাই ম্যাসাকার’ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পেয়েছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ প্রামাণ্যচিত্রে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নাগরিক প্রতিরোধের বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রামাণ্যচিত্রটির দৈর্ঘ্য ২১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড এবং এটি আজ বিকেলে সরকারি ইউটিউব চ্যানেল ও জাতীয় টেলিভিশনে একযোগে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ন্যক্কারজনক হত্যাযজ্ঞ’
প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়,
“পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ন্যক্কারজনক হত্যাযজ্ঞের বিচার নিশ্চিতে বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ। এ প্রামাণ্যচিত্র কেবল একটি ঐতিহাসিক দলিল নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সত্য উদঘাটনের এক প্রতিশ্রুতি।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নিহত সাধারণ মানুষ, ছাত্র-তরুণ ও কর্মীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং সেই সময়ের নির্মম বাস্তবতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতেই এ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি ও নির্মাণ উদ্দেশ্য
২০২৪ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে যে সহিংসতা ও রক্তপাত ঘটে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গভীর ক্ষত তৈরি করে।
নির্মাতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, “ট্রায়াল অব জুলাই ম্যাসাকার” সেই ইতিহাসের নথি হয়ে থাকবে, যেখানে রাষ্ট্রীয় দমননীতি, গণহত্যা ও নাগরিক প্রতিরোধের সাক্ষ্য সংরক্ষিত থাকবে প্রামাণ্য রূপে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন,
“এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে আমরা সেই অন্ধকার সময়ের নৃশংসতা তুলে ধরতে চেয়েছি, যাতে কেউ যেনো আর কখনো এমন দমননীতি প্রয়োগের সাহস না পায়।”
প্রামাণ্যচিত্রের বিষয়বস্তু ও উপস্থাপন
‘ট্রায়াল অব জুলাই ম্যাসাকার’-এ বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার, ভিডিও ফুটেজ, গণমাধ্যমের সংরক্ষিত ক্লিপ ও ভুক্তভোগী পরিবারের বয়ান সংযোজন করা হয়েছে।
চিত্রনাট্যে তুলে ধরা হয়েছে—কীভাবে শান্তিপূর্ণ গণঅভ্যুত্থান দমন করতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে, যার ফলে শত শত মানুষ প্রাণ হারায় এবং হাজারো মানুষ আহত হয়।
প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি, গণগ্রেফতার, এবং গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মতো ঘটনাগুলোর বিশদ বিবরণ।
নির্মাতাদের মতে, এ কাজটি “সত্য ও ন্যায়বিচারের দাবি তুলে ধরার এক প্রচেষ্টা”।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে
প্রামাণ্যচিত্রে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের উদ্বেগ, এবং বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতি সংযোজন করা হয়েছে।
নির্মাতারা বলছেন, এই অংশের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশের জনগণের আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরা হয়েছে।
একজন সহনির্মাতা বলেন,
“আমরা চাই আন্তর্জাতিক সমাজ জানুক—বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে দমননীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। এই চলচ্চিত্রটি কেবল ইতিহাস নয়, ন্যায়ের পথে এক অঙ্গীকার।”
দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রামাণ্যচিত্রটি মুক্তির পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
অনেকেই একে “রাষ্ট্রীয় সত্য প্রকাশের সাহসী পদক্ষেপ” হিসেবে অভিহিত করেছেন। নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে মানবাধিকার রক্ষা ও বিচার নিশ্চিতের দাবি।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খুব শিগগিরই প্রামাণ্যচিত্রটি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শন করা হবে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার উৎসবে অংশগ্রহণের জন্যও এটি জমা দেওয়া হবে।
ইতিহাস সংরক্ষণে নতুন উদ্যোগ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ‘ট্রায়াল অব জুলাই ম্যাসাকার’ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উদ্যোগ।
এটি শুধু একটি প্রামাণ্যচিত্র নয়, বরং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে রাষ্ট্রীয় অবস্থানের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।
একজন সংস্কৃতি বিশ্লেষক বলেন,
“এই প্রামাণ্যচিত্র প্রমাণ করে, জাতি অতীতের অন্যায় ভুলে যেতে চায় না—বরং সেখান থেকেই শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখে।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited