প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ, এবং বিটিভি ওয়ার্ল্ড।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বুধবার সন্ধ্যায় পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এটি হবে প্রফেসর ইউনূসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জাতির উদ্দেশে ভাষণ, যা রাজনৈতিক অঙ্গন, নাগরিক সমাজ ও প্রশাসনিক মহলে বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রশাসনিক সংস্কার, নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি, এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা—এই বিষয়গুলো তাঁর বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাবে।
ভাষণে আসতে পারে দিকনির্দেশনা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা
সরকার সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে আশ্বস্ত করতে চান যে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি, নাগরিকদের অংশগ্রহণ ও মতামত গ্রহণ করে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকেও তিনি আলোকপাত করতে পারেন।
অর্থনৈতিক খাতে স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ওপরও গুরুত্ব দিতে পারেন তিনি। সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে তিনি এসএমই খাত, রপ্তানি-বাণিজ্য, এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ভাষণে এসব উদ্যোগের দিকনির্দেশনা বা কর্মপরিকল্পনা উঠে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জনপ্রত্যাশা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
জাতির উদ্দেশে এই ভাষণকে অনেকেই সরকারের নীতি-সংকল্প ঘোষণার ভাষণ হিসেবে দেখছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, এবং প্রশাসনিক পরিবর্তন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা ও উদ্বেগ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা সরকার এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে—একদিকে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি, অন্যদিকে প্রশাসনিক আস্থা পুনঃস্থাপন। ফলে, তাঁর বক্তব্যে যদি স্পষ্ট সময়সূচি ও কর্মপরিকল্পনা উঠে আসে, তবে তা জাতির সামনে সরকারের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ বলেন,
“বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি স্পষ্ট ও আশ্বাসদায়ী বার্তা জাতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জনগণ জানতে পারবে, সরকার কীভাবে রাজনৈতিক স্থিতি ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।”
ভাষণের প্রস্তুতি ও সম্প্রচার ব্যবস্থা
বিটিভি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভাষণটি দুপুর ১২টা থেকে সরাসরি প্রচার করা হবে এবং পরবর্তীতে তা পুনঃপ্রচার করা হবে রাত ৯টার সংবাদ শেষে। পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিটিভি লাইভ ও ইউটিউব চ্যানেলেও একযোগে দেখা যাবে ভাষণটি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন,
“ভাষণের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। দেশের সামগ্রিক অবস্থা, ভবিষ্যৎ নীতি ও সরকারের করণীয় সম্পর্কে জাতির সামনে স্পষ্ট বার্তা দিতে চান প্রধান উপদেষ্টা।”
জনগণের প্রত্যাশা: আশা ও আস্থা ফিরে পাওয়ার বার্তা
দেশের সাধারণ নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল ও তরুণ সমাজের মধ্যে ভাষণটি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। অনেকেই আশা করছেন, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে একটি নতুন দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে, যা দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক স্থিতিশীলতায় নতুন গতি আনবে।
নগরীর এক তরুণ উদ্যোক্তা বলেন,
“আমরা চাই সরকারের কাছ থেকে বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ যদি সেটা তুলে ধরে, তাহলে মানুষের মধ্যে নতুন আস্থা তৈরি হবে।”
আগামীকালকের এই ভাষণ তাই শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নয়; এটি হতে যাচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। দেশের প্রতিটি নাগরিকের দৃষ্টি এখন প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের দিকে—যেখানে হয়তো মিলবে আশার নতুন আলো।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited