স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা থেকে স্বতন্ত্র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন সরকারি দায়িত্ব পালনের পর এবার সরাসরি রাজনৈতিক মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ও জনসম্পৃক্ত রাজনীতিতে অংশগ্রহণকে সামনে রেখে তিনি সরকারি পদ ছাড়ারও সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
ঢাকা থেকেই নির্বাচন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত
রবিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গ্রিন রোডে ধানমণ্ডি থানা নির্বাচন অফিসে ভোটার স্থানান্তর আবেদন করতে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
“ঢাকা থেকে নির্বাচন করব—এটা নিশ্চিত। আপাতত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আলোচনার ভিত্তিতে নেওয়া হবে।”
আসিফ মাহমুদ জানান, এত দিন বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের কারণে তিনি ভোট দিলেও নিজের এলাকায় ভোট দেওয়ার সুযোগ হয়নি।
“আমি ভোটার হওয়ার পর দুটি নির্বাচন হয়েছে—২০১৮ ও ২০২৪। আপনারা জানেন, এই সময়ে কেউ ভোট দিতে পারেনি। এবার অন্তত যেন নিজে ভোট দিতে পারি, সেটি নিশ্চিত করতে চাই,”—বলেন তিনি।
ভোটার তালিকায় নিজের ঠিকানা ঢাকায় স্থানান্তরের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী প্রস্তুতির আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছেন। ঢাকা-১০ আসনটি ধানমণ্ডি, নিউ মার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ থানা নিয়ে গঠিত।
সরকারি পদ ছাড়বেন, তবে সময় এখনও নির্ধারিত নয়
নির্বাচনে অংশ নিতে হলে সরকারি দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ বাধ্যতামূলক। এজন্য কবে পদত্যাগ করবেন—জয়ের সম্ভাবনা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা শেষে তা ঘোষণা করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন,
“সরকার থেকে পদত্যাগের পরই নির্বাচন করব। কবে করব, সেটি উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে জানাব। সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী করা হবে।”
নির্বাচনের আগে সরকারি উপদেষ্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে ঘিরে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।
ঢাকা-১০ আসন: দৃষ্টি এখন প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর
ঢাকা-১০ আসনে এখনো বিএনপি কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে জামায়াত এই আসনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জসীম উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে। ফলে আসিফ মাহমুদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেমন হবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক সমীকরণ ও শেষ মুহূর্তের মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ওপর।
এ বিষয়ে তিনি বলেন,
“কোনো দল কোন আসন ফাঁকা রাখল কি রাখল না—এটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমি নিজের সিদ্ধান্ত এককভাবেই নেব।”
তিনি আরও জানান,
“নির্বাচন কোথা থেকে করব, এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরিকল্পনা হলো স্বতন্ত্র হিসেবে লড়া। এরপর পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
তার এই বক্তব্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন যে, শেষ মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক জোট বা দলের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক মাঠে নতুন মুখ, আলোচনায় আসিফ মাহমুদ
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমন্বয়মূলক কাজে যুক্ত থাকার কারণে প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে তিনি পরিচিত মুখ। এবার নিজের রাজনৈতিক অবস্থান দৃশ্যমান করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাকে ঘিরে আলোচনা বাড়ছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ঢাকা-১০ একটি গুরুত্বপূর্ণ শ urbano constituency, যেখানে শিক্ষিত ও সচেতন ভোটারদের উপস্থিতি বেশি। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করা কোনো সহজ কাজ নয়। তবে সঠিক কৌশল, পরিচিতি ও প্রচারণা পরিচালনা করতে পারলে প্রতিযোগিতায় সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
ভোটের রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নেওয়ার ঘোষণা
ভোটার হিসেবে নিজের অবস্থান বদলের মধ্য দিয়ে আসিফ মাহমুদ জানিয়ে দিয়েছেন—তিনি শুধু নির্বাচন করবেনই না, বরং নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় অংশও নেবেন। তার ভাষায়,
“ভোট অপচয় না করার জন্যই আমি ঢাকায় ভোটার হলাম। এবার যেন আমার নিজের ভোটও কাজে লাগে।”
প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে নির্বাচনী রাজনীতিতে যাত্রা—এ পরিবর্তন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে কোনদিকে নিয়ে যায়, তা দেখবে সময়।










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited