নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমজনতার দল’কে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন তালিকায় না রাখায় দলটির সদস্যসচিব তারেক রহমান টানা চার দিন ধরে ইসির প্রধান ফটকের সামনে আমরণ অনশন পালন করছেন। আজ রবিবার দুপুরে তাঁর প্রতি সহমর্মিতা জানাতে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে যান ঢাকা-৬ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন। অনশনস্থলে তারেকের সঙ্গে কথা বলার পর ইশরাক ইসি সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ইশরাক বলেন, “তারেক রহমানের দলকে নিবন্ধন না দিলে ইসিকে অবশ্যই জানাতে হবে যে কোন দলগুলো পূর্ণ শর্ত পূরণ করেছে। সব দলের অডিটেড রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।” তাঁর দাবি—ইসির তালিকাভুক্ত ৫৭টি রাজনৈতিক দলের বেশিরভাগই প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ড, অকার্যকর সংগঠন কিংবা প্রকৃত রাজনৈতিক এজেন্ডাহীনতার কারণে পুনর্বিবেচনার যোগ্য।
তিনি বলেন, “নিবন্ধিত অনেক দল আছে যাদের প্রকৃত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই, আদর্শিক অবস্থান নেই, জনগণের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। তাদের গণতন্ত্রে বিশ্বাস আছে কি না, নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো আছে কি না—এসবই যাচাই হওয়া দরকার। একজন নাগরিক হিসেবে আমি চাই, নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের পুনর্নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চালু হোক। এতে স্পষ্ট হবে কারা সত্যিকারের রাজনৈতিক দল এবং কারা ভুঁইফোড়।”
ইশরাক দাবি করেন, রাজনৈতিক সুবিধা অনুযায়ী অতীতে ক্ষমতাসীন দলগুলো অনেক অকার্যকর রাজনৈতিক দলকে প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। তাঁর ভাষায়, “এমন ভুঁইফোড় দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনে থাকা ঠিক নয়। তাইই তারেক রহমানের প্রতি সমর্থন জানাতে আমি এসেছি এবং দাবি জানাচ্ছি—অবিলম্বে তাঁর দলকে নিবন্ধন দিতে হবে।”
বৈষম্যমূলক আচরণ—ইশরাকের অভিযোগ
সাক্ষাৎকারে ইশরাক আরও অভিযোগ করেন যে সরকার ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন আচরণ করে। তিনি বলেন,
“আমরা দেখেছি সরকারের কোনো কোনো জায়গায় এমন ব্যক্তিও আছে, যাকে রিসিভ করতে গেট খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ দিনের পর দিন রাস্তায় বসে থাকলেও সরকার নজর দেয় না। আমি নিজেও এমন বৈষম্যের শিকার হয়েছি। তাহলে আজ তারেক রহমানের সঙ্গেও কেন এমন আচরণ করা হচ্ছে?”
তারেক রহমান দাবি করেছেন, তাঁর দলের নিবন্ধন বাতিলের পেছনে ইসির দুই ছাত্র উপদেষ্টার প্রভাব থাকতে পারে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইশরাক বলেন, “আমি এটাকে উড়িয়ে দিতে পারি না। এমন সময় দেশে গেছে যখন বিশেষ ব্যক্তিদের সমালোচনা করা মানেই বড় ঝুঁকি। সেই সময়ও তারেক সত্যকে সত্য বলেছেন, মিথ্যাকে মিথ্যা বলেছেন। তাই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণেও তাঁর দলের নিবন্ধন না দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
চার দিন ধরে অনশন; শারীরিক অবস্থার অবনতি
গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে তিনটি দল—
- জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
- বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী)
- বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি
এর নাম নিবন্ধনের জন্য অনুমোদন দেয়। কিন্তু ‘আমজনতার দল’ তালিকায় না থাকায় সেদিন সকাল থেকেই অনশনে বসেন তারেক রহমান। দলটির সহযোগীরা জানান, তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, তবে তিনি অনশন ভাঙতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
অনশনস্থলে অসংখ্য নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক উপস্থিত হয়ে তারেকের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি—রাজনৈতিক দল নিবন্ধন একটি সংবিধানসম্মত, স্বচ্ছ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। সেখানে রাজনৈতিক পক্ষপাত কিংবা অস্বচ্ছতা থাকলে তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর আঘাত হানে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রশ্নে নতুন বিতর্ক
তারেক রহমানের অনশন এবং ইশরাক হোসেনের দাবি—দুই ঘটনাই রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন যাচাই ও পুনর্বিন্যাস একটি বড় সংস্কার হতে পারে। আবার অনেকে মনে করছেন, এই দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তবে বিষয়টি এখন পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করছে। অনশনস্থলে তারেক এখনও অবস্থান করছেন; সমর্থকরা বলছেন, তিনি নিবন্ধন না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন।









সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited