দেশের কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং বাজারে সার সরবরাহের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সরকার ১ লাখ ৭০ হাজার টন ইউরিয়া ও টিএসপি সার আমদানির পাঁচটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। আজ রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা উপদেষ্টা পরিষদের ৪৪তম বৈঠকে এসব প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বৈঠকে জানানো হয়, সার সরবরাহে কোনো ধরনের সংকট দেখা দিলে তা কৃষি উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে রবি মৌসুম, বোরো ও বিভিন্ন সবজি মৌসুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপর্বে ইউরিয়া ও ফসফেট সার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এসব আমদানি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর মাধ্যমে সার আমদানির প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করা হয়।
ইউরিয়া আমদানির তিন লট
অনুমোদিত পাঁচ প্রস্তাবের মধ্যে তিনটি ইউরিয়া সারের লট। মোট ১ লাখ ১০ হাজার টন দানাদার ইউরিয়া তিনটি আলাদা উৎস থেকে আমদানি করা হবে।
প্রথম লটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৪০ হাজার টন বাল্ক দানাদার ইউরিয়া আমদানি করা হবে। এ লটের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৫ কোটি ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। প্রতি টনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯৯ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার। ফার্টিগ্লোব গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সার সরবরাহকারী।
দ্বিতীয় লটে সৌদি আরবের স্যাবিক এগ্রিনিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে আরও ৪০ হাজার টন ইউরিয়া আমদানি করা হবে। স্যাবিকের লটের ব্যয় হবে প্রায় ১৯০ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখানে প্রতি টনের দাম ঠিক হয়েছে ৩৯০ মার্কিন ডলার। নিয়মিত মান বজায় রাখা এবং নির্ভরযোগ্য সরবরাহের কারণে স্যাবিক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার।
তৃতীয় লটে চট্টগ্রামভিত্তিক দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৩০ হাজার টন ব্যাগজাত দানাদার ইউরিয়া ক্রয় করা হবে। এ লটের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৩৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি টনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ৩৭৯ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হওয়ায় এই ইউরিয়া তুলনামূলক দ্রুত মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
৬০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন
ইউরিয়া ছাড়াও বৈঠকে ৬০ হাজার টন ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার আমদানির জন্য দুইটি লট অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএডিসির মাধ্যমে মরক্কোর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওসিপি নিউট্রিক্রপস কোম্পানি থেকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (জিটুজি) এ সার সংগ্রহ করা হবে।
টিএসপি সারের দুই লটেই ৩০ হাজার টন করে সার আমদানি করা হবে। প্রতিটি লটের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৯ কোটি ৫১ লাখ ২ হাজার টাকা। প্রতি টনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪২ মার্কিন ডলার। ফসফেটভিত্তিক সার দেশের সবজি, ডাল, তেলবীজ ও অন্যান্য মৌসুমি ফসলের উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে।
সারের বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত
বৈঠক শেষে সরকারি কর্মকর্তারা জানান, এই আমদানিগুলো অনুমোদিত হওয়ায় কৃষকেরা গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমে কোনো ধরনের সঙ্কটে পড়বেন না। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সময়মতো সারের সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। তাই আগাম পরিকল্পনা অনুযায়ী সার আমদানি জোরদার করা হয়েছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, “বৈশ্বিক বাজারে সার মূল্য ওঠানামা করলেও দেশে যেন কৃষকরা ভোগান্তিতে না পড়েন, সেজন্য সরকার খুব সতর্কভাবে আমদানি প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে।”
তিনি আরও জানান, মাঠ পর্যায়ে সার বিতরণব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে মনিটরিং জোরদার করা হবে, যাতে কোনো ধরনের মজুতদারি বা অবৈধ মূল্য বৃদ্ধি ঘটতে না পারে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited