রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর নতুন করে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। এতে দেশটির একাধিক অঞ্চলে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে এবং নাগরিকদের মধ্যে শীতের আগে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কিয়েভের জ্বালানিমন্ত্রী স্বিতলানা গ্রিনচুক শনিবার এক বিবৃতিতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “রাশিয়া আবারও ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করছি।” তবে তিনি হামলার সুনির্দিষ্ট এলাকা বা স্থাপনার নাম প্রকাশ করেননি।
বর্ধমান হামলার শিকার ইউক্রেনের জ্বালানি খাত
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই মস্কো বারবার ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই হামলার মাত্রা আরও বেড়েছে। ইউক্রেন সরকারের তথ্যমতে, রাশিয়ার টার্গেটে রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, গ্যাস সরবরাহ কেন্দ্র ও জ্বালানি সঞ্চয়াগারসহ প্রধান অবকাঠামো।
রাশিয়ার এই অব্যাহত হামলায় ইউক্রেনের জ্বালানি উৎপাদন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের মৌসুমে এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। দেশের অনেক অঞ্চলে গরমের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে তাপবিভ্রাট দেখা দিতে পারে, যা মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।
ওডেসায় ড্রোন হামলা, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ স্থাপনা
রাশিয়ার সর্বশেষ হামলার ঘটনাটি ঘটেছে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ওডেসায়। স্থানীয় গভর্নর ওলেগ কিপার জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় রাশিয়ার ড্রোন হামলায় একটি জ্বালানি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেন, “আমাদের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা হয়েছে। দমকল কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।”
তবে এখন পর্যন্ত এই হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাটি মেরামতের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং অচিরেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চলছে।
প্রতিশোধমূলক হামলায় সক্রিয় ইউক্রেন
অন্যদিকে, ইউক্রেনও রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোতে পাল্টা হামলা জোরদার করেছে। দেশটি সম্প্রতি মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ তেল ডিপো ও শোধনাগারগুলোর ওপর ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার লক্ষ্য রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি ব্যাহত করা।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের দাবি, এসব হামলার মাধ্যমে রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের জ্বালানি সরবরাহে চাপ তৈরি হচ্ছে।
তবে রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইউক্রেনের এসব হামলা বেসামরিক স্থাপনাগুলোকেও ঝুঁকির মুখে ফেলছে। মস্কোর দাবি, তারা “সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে” হামলা চালাচ্ছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলছে—রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের অসংখ্য বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ জ্বালানি সংকটে পড়েছে।
শীতের আগে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে শীত মৌসুমে ব্যাপক তাপঘাটতি দেখা দিতে পারে। দেশটির অনেক শহরে ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করছে, কিন্তু পুনর্গঠনে সময় লাগবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে জ্বালানি অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে নাগরিকদের গরম সরবরাহ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জরুরি সহায়তা কার্যক্রম চালু করেছে।
চার বছরের আগ্রাসনে ধ্বংস জ্বালানি খাত
রাশিয়া প্রায় চার বছর ধরে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গ্যাস সরবরাহ লাইন ও অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। এই ধারাবাহিক হামলার ফলে ইউক্রেনের জ্বালানি খাতের একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এমন হামলা অব্যাহত থাকে, তাহলে দেশটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হবে এবং নাগরিক জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের এই পাল্টাপাল্টি হামলা আবারও প্রমাণ করছে যে যুদ্ধ কেবল সীমান্তেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি জনগণের জীবনযাত্রা, অর্থনীতি ও মৌলিক অবকাঠামোকে সরাসরি আঘাত করছে। জ্বালানি সংকট এখন শুধু ইউক্রেনের সমস্যা নয়; এটি ইউরোপের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্যও এক বড় হুমকি হয়ে উঠছে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited