বলিউডের জনপ্রিয় কোরিওগ্রাফার, পরিচালক ও প্রযোজক ফারাহ খান একসময় যেমন নাচে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের, তেমনি এখন নিজের ইউটিউব কনটেন্ট দিয়েও মাতাচ্ছেন কোটি ভক্তকে। ৩০০ কোটির সিনেমা বানিয়ে যে পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারেননি, তার চেয়েও বেশি উপার্জন করছেন ইউটিউব থেকে—সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমন চমকপ্রদ তথ্যই জানিয়েছেন তিনি।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বলিউডে সক্রিয় ফারাহ খানের পরিচয় একাধিক। নৃত্যপরিচালক, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও পরিচালক—সব ভূমিকাতেই তিনি রেখেছেন নিজস্ব স্বাক্ষর। শাহরুখ খান, আমির খান, সালমান খান, হৃতিক রোশন থেকে শুরু করে প্রজন্মের প্রায় সব শীর্ষ নায়কের সঙ্গেই কাজ করেছেন তিনি।
চলচ্চিত্র থেকে ইউটিউব: জীবনের বাঁকবদল
ফারাহর পরিচালনায় প্রথম দুটি ছবি—‘ম্যায় হুঁ না’ (২০০৪) ও ‘ওম শান্তি ওম’ (২০০৭)—বলিউডে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সাফল্য পায়। কিন্তু পরবর্তী দুটি ছবি ‘তিস মার খান’ (২০১০) এবং ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ (২০১৪) আশানুরূপ সাড়া পায়নি। প্রযোজকরা আর্থিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়েন, আর ফারাহ নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ফারাহ বলেন,
“একসময় এমন সময় এসেছিল, যখন আমি কাজ পাচ্ছিলাম না। সফল চলচ্চিত্র বানাতে পারছিলাম না। তখন মনে হলো, হয়তো এখন নতুন কিছু শুরু করা দরকার।”
এই ভাবনা থেকেই তিনি ২০২০ সালে নিজের ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন। বাড়ির রাঁধুনি দিলীপকে সঙ্গে নিয়ে রান্না, হাস্যরস ও তারকাদের সঙ্গে আলাপচারিতা—এই তিন উপাদানকে মিলিয়ে তৈরি করেন সহজ, প্রাণবন্ত কনটেন্ট।
রান্না, রসিকতা ও বাস্তবতা—দর্শকের মন জয়
ফারাহ খানের ইউটিউব চ্যানেলে তার ঘরোয়া রূপটাই দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। তিনি হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে অতিথি তারকাদের সঙ্গে কথা বলেন, কখনো রান্নাঘরে গল্প করেন, আবার কখনো মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তাঁর ভিডিওগুলোতে উঠে আসে বলিউডের তারকাদের অচেনা দিক, যা দর্শকদের কাছে এক অনন্য আকর্ষণ।
এই কনটেন্ট দিয়েই তিনি রাতারাতি হয়ে ওঠেন ‘বিনোদনের নতুন রান্নাঘরের রানি’।
ফারাহ বলেন,
“আমি সবসময় বাস্তব থাকতে চাই। আমার দর্শকরা যেভাবে আমাকে সিনেমায় দেখেছেন, ইউটিউবেও তারা সেই ফারাহকেই পান—নির্ভেজাল, সোজাসাপটা আর খানিকটা দুষ্টুমি মেশানো।”
ইউটিউব থেকেই কোটি টাকার আয়
সাক্ষাৎকারে ফারাহ খান জানান, ইউটিউবে এখন তাঁর আয়ের উৎস শুধু বিজ্ঞাপন নয়, বরং বড় বড় ব্র্যান্ডের সহযোগিতামূলক প্রচার (ব্র্যান্ড কোলাবরেশন) থেকেও আসে মোটা অর্থ।
সূত্র মতে, ফারাহ একেকটি ব্র্যান্ড প্রোমোশনের জন্য ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পান। তিনি হাসতে হাসতে বলেন,
“৩০০ কোটির সিনেমা বানিয়ে যতটা উপার্জন করেছি, ইউটিউব থেকে তার চেয়েও বেশি পাচ্ছি—তাও ঘর থেকে বের না হয়েই!”
যদিও সঠিক অঙ্ক প্রকাশ করেননি, তবে বলিউডজুড়ে এখন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে ফারাহর এই সাফল্য।
মায়ের প্রেরণায় নতুন শুরু
ফারাহ খানের তিন সন্তান—দিব্যা, অন্যা ও সিজার। বর্তমানে তাঁদের বয়স ১৭ বছর। নিজের সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই ইউটিউব কনটেন্ট তৈরি শুরু করেন তিনি।
“আমার সন্তানরা আগামী বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, আর সেটা বেশ ব্যয়বহুল। সেই কারণেই ইউটিউবের কাজটা শুরু করেছিলাম। এখন এটা আমার পেশা নয়, নেশায় পরিণত হয়েছে,” বলেন ফারাহ।
“ভালো থাকা মানে কাজ করা”
ফারাহর মতে, জীবনে টিকে থাকতে হলে আনন্দের উৎস হতে হবে নিজের ভেতরেই।
“আপনার জীবন অন্য কারও চারপাশে ঘুরতে পারে না। খুশি থাকা মানে নিজের কাজকে ভালোবাসা। আমি এমন কাজ করতে চাই, যা আমায় হাসায়। যদি এমন কাজ পাই, আমি ৮০ বছর বয়সেও সেটি করে যাব।”
বলিউডের নাচ থেকে শুরু করে বড় বাজেটের সিনেমা, আর এখন ডিজিটাল দুনিয়া—ফারাহ খান প্রমাণ করেছেন যে সৃজনশীলতা কখনও হারায় না, শুধু মাধ্যম বদলায়।
একসময় যিনি পর্দার আড়াল থেকে পরিচালনা করতেন কোটি টাকার প্রকল্প, এখন তিনিই নিজের ঘরোয়া ইউটিউব সেট থেকে গড়ে তুলেছেন এক নতুন ক্যারিয়ার—আর সেই পথেই এসেছে আর্থিক ও মানসিক পরিপূর্ণতা।
বলিউড হয়তো তাঁকে পরিচালক ফারাহ খান হিসেবে মনে রাখবে, কিন্তু নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি অনুপ্রেরণা—যিনি প্রমাণ করেছেন, “বড় পর্দা নয়, বড় সাহসই আসল পরিচয়।”










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited