বাংলাদেশের হাইটেক শিল্প খাতে বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো আবারও। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (BEPZA Economic Zone) দ্বিতীয় ড্রোন উৎপাদন কারখানা স্থাপনে চুক্তি করেছে চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান অ্যারোসিন্থ লিমিটেড।
বুধবার রাজধানীর বেপজা কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং অ্যারোসিন্থ লিমিটেডের মধ্যে এই বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবির এবং অ্যারোসিন্থ লিমিটেডের অনুমোদিত প্রতিনিধি হু দানদান চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, সদস্য (প্রকৌশল) আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য (অর্থ) এ এন এম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস) মো. খুরশিদ আলম, নির্বাহী পরিচালক (নিরাপত্তা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সমীর বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ এস এম আনোয়ার পারভেজ এবং অ্যারোসিন্থ লিমিটেডের অন্যান্য প্রতিনিধিরা।
৩৫ লাখ ডলারের বিনিয়োগে উন্নত ড্রোন উৎপাদন
চুক্তি অনুযায়ী, অ্যারোসিন্থ লিমিটেড বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। প্রতিষ্ঠানটি এখানে খেলনা ড্রোন, মাছ ধরার ড্রোন এবং হালকা পণ্য পরিবহনের ড্রোনসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক ও বিনোদনমূলক ড্রোন উৎপাদন করবে।
বার্ষিক ১ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট ড্রোন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরাসরি ৭০ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে বেপজা।
বেপজার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অ্যারোসিন্থ লিমিটেডের এই বিনিয়োগ দেশের হাইটেক শিল্পখাতে প্রযুক্তিনির্ভর রপ্তানি ও উদ্ভাবনী উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
বেপজার দ্বিতীয় ড্রোন প্রকল্প
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে এটি হবে দ্বিতীয় ড্রোন উৎপাদন প্রকল্প। প্রথম প্রকল্পটি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে কৃষি, অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধার, পণ্য পরিবহন, সিনেমাটোগ্রাফি ও ম্যাপিংয়ের জন্য ব্যবহৃত বিশেষায়িত ড্রোন তৈরি করা হচ্ছে।
দুটি প্রকল্পই বেপজার বিনিয়োগ কাঠামোয় এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে, যা বাংলাদেশের শিল্পখাতে “ভবিষ্যৎমুখী উৎপাদন বৈচিত্র্য” আনার ধারাবাহিক প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন,
“এ ধরনের হাই-টেক বিনিয়োগের জন্য বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বেছে নেওয়ায় অ্যারোসিন্থ লিমিটেডকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা তাদের ব্যবসা পরিচালনায় সব ধরনের সহায়তা দেব।”
অর্থনৈতিক অঞ্চলের অগ্রগতি ও রপ্তানি সাফল্য
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছে। চলমান উন্নয়নকাজের মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং ১ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
এ ছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শিগগিরই উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। বেপজার কর্মকর্তাদের মতে, “এই অগ্রগতি শুধু রপ্তানি বাড়াচ্ছে না, বরং প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করছে।”
বাংলাদেশে হাইটেক উৎপাদনের নতুন যুগ
বিশ্বব্যাপী ড্রোন শিল্প দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, যার বাজারমূল্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কয়েকশ’ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বিভিন্ন বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে বেপজার এই বিনিয়োগ অনুমোদনকে বিশেষজ্ঞরা ‘ভবিষ্যৎমুখী কৌশলগত পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন।
বাংলাদেশ সরকারের ‘ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রি ভিশন–২০৪১’–এর সঙ্গে এই উদ্যোগ সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ও রপ্তানিমুখী অর্থনীতির পথে দেশের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করবে।
চীনা প্রতিষ্ঠান অ্যারোসিন্থ লিমিটেডের নতুন ড্রোন কারখানা স্থাপন শুধু একটি বিনিয়োগ নয়; এটি বাংলাদেশের শিল্পায়নের গতিপথে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সংযোজন। দেশের তরুণ প্রকৌশলীদের জন্য এটি হবে শেখার এক নতুন ক্ষেত্র, আর অর্থনীতির জন্য রপ্তানি সম্ভাবনার আরেকটি জানালা।
বেপজার আশা—এই ধরনের হাইটেক প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ড্রোন একদিন বিশ্ববাজারে উড়বে, দেশের রপ্তানি খাতে নতুন উচ্চতা যোগ করবে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited