ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দীর্ঘদিন ধরে ‘শাপলা’ প্রতীকের জন্য অনড় অবস্থান রাখা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবশেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সমঝোতায় এসেছে। রোববার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের জানান, দলটি নতুন সংযুক্ত ‘শাপলা কলি’ প্রতীক গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে।
তিনি বলেন, “এনসিপি শাপলা, সাদা শাপলা ও শাপলা কলি—এই তিনটি প্রতীক চেয়েছিল। নির্বাচন কমিশন যে তালিকায় শাপলা কলি দিয়েছে, আমরা তা নেব। আমাদের তৃণমূল প্রতীকটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। এখন নির্বাচনে আমাদের মূল লড়াই হবে বিএনপির ধানের শীষের সঙ্গে।”
প্রতীক নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক ও কৌশল
এনসিপির পক্ষ থেকে সিইসির সঙ্গে বৈঠকে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছিল। দলের প্রতিনিধি ছিলেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মূসা। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, “শাপলা প্রতীক না পাওয়ার বিষয়টি আমরা এখনও স্পষ্টভাবে জানি না। এখানে অনেক কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে। আমরা আমাদের ফাইট করছি। তবে বৃহত্তর স্বার্থের কারণে এখন শাপলা কলি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্বাচনী ফেজে অংশগ্রহণের জন্য প্রতীক পাওয়া জরুরি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “শাপলা কলি নিলে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারব। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী জয়ে সহায়তা করা। তবে নির্বাচন কমিশনের স্বেচ্ছাচারী আচরণ আমরা লক্ষ্য করেছি।”
নতুন প্রতীকের অন্তর্ভুক্তি
এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে এনসিপিসহ দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতীক বেছে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পরও এনসিপি শাপলা প্রতীকের দাবিতে অনড় ছিল।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, শাপলা প্রতীক তালিকায় নেই, তাই দলকে এটি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এনসিপি নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তারা শাপলা প্রতীকের বাইরে কোনো প্রতীক গ্রহণ করবে না এবং যদি না মেলে, আন্দোলনে নামবে।
এ অবস্থার পর গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন প্রতীক তালিকা সংশোধন করে ‘শাপলা কলি’সহ চারটি নতুন প্রতীক যুক্ত করে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এনসিপি জানিয়েছিল, তারা শাপলা প্রতীকের বাইরে অন্য কোনো প্রতীক নেবে না। এরপর আলোচনার মাধ্যমে দলটি শাপলা কলি গ্রহণের সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।
নির্বাচনী কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এনসিপি নেতাদের মতে, শাপলা কলি গ্রহণ করলেও নির্বাচনে দলের মূল কৌশল অপরিবর্তিত থাকবে। তারা এখনও নিজেদের তৃণমূল সমর্থন ও জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভর করে নির্বাচন পরিচালনা করবে। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং সমর্থন শক্তিশালী করতে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন প্রতীক গ্রহণ করেও এনসিপি তাদের নির্বাচনী পরিচয় বজায় রাখতে পারবে। ধানের শীষের সঙ্গে প্রতীক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তালিকায় ‘শাপলা কলি’ অন্তর্ভুক্তি এবং এনসিপির গ্রহণযোগ্যতা নির্বাচনী মাঠে দলের অবস্থানকে সুসংহত করবে। এর মাধ্যমে দলটি নির্বাচনী ফেজে অংশ নিতে সক্ষম হবে এবং প্রার্থীদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, শাপলা কলি গ্রহণ করলেও এনসিপি তাদের মূল ভোটার ভিত্তি ধরে রাখার চেষ্টা করবে।
এভাবেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রতীকের বিষয়ে এনসিপি ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সমঝোতা গড়ে উঠল, যা দলের নির্বাচনী পরিকল্পনা এবং ভোটারদের মনোযোগ কেড়ে নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।









সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited