ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় আল্পস পর্বতমালায় তুষারধসে পাঁচজন জার্মান পর্বতারোহীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক বাবা ও তাঁর ১৭ বছর বয়সী কন্যা। শনিবার বিকেলে ডলোমাইট পর্বতমালার সাউথ টাইরোল অঞ্চলে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে স্থানীয় উদ্ধার পরিষেবা সংস্থা।
ইতালির রাজধানী রোম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, দুটি পৃথক পর্বতারোহী দল ওই সময় পর্বতের একটি অংশে আরোহন করছিল। হঠাৎ প্রবল তুষারধস নেমে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুটি দলই তুষারের ধাক্কায় আক্রান্ত
উদ্ধার সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়, দুইটি পর্বতারোহী দল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাউথ টাইরোল অঞ্চলের সুইস সীমান্তের কাছাকাছি পাহাড়ে তুষারের প্রবল ধাক্কায় আক্রান্ত হয়। প্রথম দলের তিনজন সম্পূর্ণভাবে তুষারের নিচে চাপা পড়ে যান এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান।
দ্বিতীয় দলের চারজন সদস্যের মধ্যে দুজন কাছের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। অন্য দুইজনের খোঁজ মিলছিল না। পরদিন রোববার সকালে উদ্ধারকর্মীরা তুষারের নিচ থেকে ওই দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করেন।
নিহতদের মধ্যে বাবা ও কন্যা
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে এক দম্পতি এবং তাঁদের ১৭ বছর বয়সী কন্যা রয়েছেন। তাঁরা জার্মানির বাভারিয়া অঞ্চল থেকে ইতালিতে এসেছিলেন শীতকালীন অভিযানে অংশ নিতে। অন্য দুইজন পর্বতারোহীও একই দলের বন্ধু ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্ধার অভিযানে বাধা দিয়েছে খারাপ আবহাওয়া
ইতালির আল্পাইন রেসকিউ সার্ভিস এক বিবৃতিতে জানায়, দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু করা হলেও প্রবল তুষারপাত, কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডা বাতাসের কারণে হেলিকপ্টার নামানো সম্ভব হয়নি। ফলে উদ্ধার অভিযান কয়েক ঘণ্টা বিলম্বিত হয়।
রবিবার সকালে আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে এলে তল্লাশি পুনরায় শুরু হয় এবং তুষারের নিচ থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
একজন উদ্ধারকর্মী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল। তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১০ ডিগ্রির নিচে, আর প্রতি মুহূর্তে নতুন করে তুষারধসের আশঙ্কা ছিল।”
সাউথ টাইরোল: দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা
ইতালির সাউথ টাইরোল অঞ্চলটি সুইস ও অস্ট্রিয়ার সীমান্তঘেঁষা পর্বতাঞ্চল, যা ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় স্কি ও ট্রেকিং এলাকা হিসেবে পরিচিত। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রচুর তুষারপাত হয়, যার ফলে প্রায়ই তুষারধসের ঘটনা ঘটে।
ইতালির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেবল এই অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেই আল্পস অঞ্চলে একাধিক তুষারধস ঘটেছে। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে এক ডজনের বেশি মানুষ আহত বা নিহত হয়েছেন।
সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন পর্যটক ও অভিযাত্রীদের প্রতি সতর্কবার্তা জারি করেছে। তুষারের স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত পর্বতারোহণ ও স্কি কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সাউথ টাইরোল প্রদেশের গভর্নর আরনো কম্পাসার এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি এক গভীর ট্র্যাজেডি। নিহতরা অভিজ্ঞ পর্বতারোহী ছিলেন, কিন্তু প্রকৃতির শক্তি কখনো কখনো সব প্রস্তুতিকে অকার্যকর করে দেয়।”
পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা
জার্মান দূতাবাসের এক মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, ইতালির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং নিহতদের মরদেহ দ্রুত নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, “আমরা নিহত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। জার্মানি ও ইতালি উভয় দেশই উদ্ধার ও সহায়তার কাজে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।”
ইউরোপে শীতের শুরুতেই তুষারঝড়ের তাণ্ডব
আবহাওয়াবিদদের মতে, ইউরোপজুড়ে শীতের শুরুতেই তীব্র ঠান্ডা হাওয়া বইছে, যার প্রভাবে আল্পস অঞ্চলে আগেভাগেই ভারী তুষারপাত শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় আরো তুষারধসের ঝুঁকি বেড়েছে বলে সতর্ক করেছে ইতালির আবহাওয়া অধিদপ্তর।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited