দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু স্থানে আজ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতও হতে পারে, বিশেষ করে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু অঞ্চলে।
আকাশে মেঘ, আবহাওয়ায় শরতের শেষ সুর
আবহাওয়াবিদদের মতে, মৌসুমি বায়ু এখনো বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় রয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ুর এ প্রভাবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলেও আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে, কিছু এলাকায় বিকেল বা সন্ধ্যায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকবে তুলনামূলক বেশি, ফলে আর্দ্র গরম অনুভূত হতে পারে।
তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ, বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় সামান্য শীতলতা অনুভূত হলেও সামগ্রিকভাবে আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তন দেখা যাবে না।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় নরসিংদীতে—৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৌসুমের জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি। অপরদিকে আজ শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়—২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর্দ্রতা ও বাতাসের অবস্থা
আজ ভোর ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯১ শতাংশ, যা বায়ুতে আর্দ্রতার ঘনত্বের উচ্চমাত্রা নির্দেশ করে। এতে শরীরে ঘাম ও ভারী গরম অনুভব হতে পারে, বিশেষ করে দিনের দ্বিতীয়ার্ধে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণ দিক থেকে আসা আর্দ্র বাতাস বঙ্গোপসাগরের ওপরের জলীয়বাষ্পকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে টেনে আনছে, যার প্রভাবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়েছে।
ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা উত্তরের জেলাগুলোতে
রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে এসব অঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে সাময়িক জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আবহাওয়াবিদরা।
রাজশাহী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলেও আকাশ মেঘলা থাকবে এবং কোথাও কোথাও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
মৌসুমি বায়ুর বিদায় বিলম্বিত
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি বিদায় নেয়। তবে এ বছর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব দীর্ঘায়িত হয়েছে। ফলে নভেম্বরের শুরুতেও বৃষ্টিপাত দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মৌসুমি প্রবাহের সময় ও তীব্রতা এখন আর স্থিতিশীল থাকছে না। এই পরিবর্তন কৃষি ও ফসল উৎপাদনেও প্রভাব ফেলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বলেন,
“বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রস্থান এখন আর নিয়মমাফিক হচ্ছে না। অক্টোবরের শেষ দিকেও যেভাবে আর্দ্রতা ও বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে, তা মৌসুমি পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে।”
সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত ও সময়সূচি
আজ শুক্রবার ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে। আগামীকাল শনিবার সূর্যোদয় ভোর ৬টা ৫ মিনিটে। আবহাওয়ার এই সময়ে দিন ছোট হচ্ছে এবং রাত দীর্ঘ হচ্ছে, যা শীত মৌসুমের আগমনের ইঙ্গিত বহন করে।
নাগরিকদের প্রতি পরামর্শ
আবহাওয়া অধিদপ্তর পরামর্শ দিয়েছে, বজ্রসহ বৃষ্টির সময় খোলা জায়গায় অবস্থান না করতে, বৈদ্যুতিক খুঁটি বা গাছের নিচে আশ্রয় না নিতে এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে।
বৃষ্টি চলাকালে সড়কে চলাচলের সময় সতর্কতা অবলম্বন ও জলাবদ্ধ এলাকায় শিশুদের খেলা না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।







সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited