দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একেবারে আবার এক চমক দেখালো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক আজ জানালো, gross রিজার্ভ এখন দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি গত দুই-দুই বা দিড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-র “ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম৬)” পদ্ধতি অনুসারে এই রিজার্ভের নিট মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
এই তথ্য গতকালের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নিচে এই অর্থনৈতিক ঘটনার বিশ্লেষণ, কারণ এবং সম্ভাব্য প্রভাব আলোচনা করা হলো।
রিজার্ভ বাড়ার কারণ কি?
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য এবং সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা গেছে নিম্নলিখিত কারণগুলো রিজার্ভ বাড়ার পেছনে রয়েছে:
- রেমিটেন্স আয় বৃদ্ধি: বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের বাংলাদেশি টাকায় রেমিটেন্স পাঠানো বেড়েছে, যা রিজার্ভে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে।
- রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ: রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়ছে এবং আমদানির চাপ কিছুটা নেমেছে—এগুলো রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
- ঋণ ও বাজেট সহায়তা: বহুরাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাওয়া সহায়তা ও ঋণও রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে।
নিচের দিকে নজর দেওয়া উচিত কেন?
তবে শুধুই রিজার্ভের পরিমাণ দেখা যথেষ্ট নয়। কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো সতর্ক হতে হবে:
- “নেট রিজার্ভ” বা আইএমএফ-বিপিএম৬ পদ্ধতির রিজার্ভ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে অন্তর্ভুক্ত হয় না বিদেশি মাত্রিক দায়-দায়িত্ব বা স্বল্পমেয়াদি ঋণ। তাই gross রিজার্ভই সব কিছু বোঝায় না।
- রিজার্ভ বাড়লেও যদি বিনিময়হারের ওপর চাপ থেকে যায়, অথবা আমদানির বেড়ে যাওয়া ও রপ্তানিতে হঠাৎ পতন হয় — তাহলে রিজার্ভ দ্রুত কমতেও পারে। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা বা জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো প্রভাব ফেলতে পারে।
- রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি দেশের চলতি হিসাব ঘাটতি, টাকা বিনিময়হারের স্থিতিশীলতা, এবং বহিঃমুখী ঋণ নির্ভরতা ভালো রাখতে হবে।
কেন এই মুহূর্তে ভালো সংকেত?
এই মুহূর্তে রিজার্ভ বাড়ার খবর মাঠে কিছু ইতিবাচক সংকেত দিচ্ছে—
- রিজার্ভ বাড়ায় অর্থনৈতিক মজবুতির প্রতিফলন পাওয়া যায়, যা বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সুবিধার দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
- রিজার্ভ বাড়লে আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমে যায়—এটি রাজধানী ও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে ভালো খবর।
- রেমিটেন্স ও রপ্তানিতে ইতিবাচক অবস্থার সক্রিয়তা দেখে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এক প্রকার পুনরুদ্ধার আরম্ভ হয়েছে।
ভবিষ্যতে বিশদ নজর দেওয়া বিষয়গুলো
রিজার্ভ এই পর্যায়ে থাকলেও এখন থেকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত নিম্নলিখিত বিষয়ের দিকে:
- আমদানি ও রপ্তানির দ্বিধাগ্রস্ত ভারসাম্য (trade-balance) ঠিক রাখতে।
- বৈদেশিক ঋণের মাত্রা এবং ঋণ পরিশোধের সময়সূচি মনিটর করা।
- রিজার্ভের বিশেষভাবে নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় উৎপাদন, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য এবং বিদেশি মুদ্রার উৎস প্রসারণ করা।
- বিনিময়হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মজুদ ব্যবহার ও বাজার হস্তক্ষেপ সুসংগঠিত করা।
এই মুহূর্তে রিজার্ভের এই পরিমাণ একটি শুভ সংকেত দিচ্ছে। তবে এটি অবিচলিত সাফল্যের নিশ্চয়তা নয়—বরং ধরে রাখার জন্য কার্যকর নীতি ও বাস্তব অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। রিজার্ভ বাড়লে দেশ গতিশীল হয়, তবে বাড়িয়ে রাখা আরও কঠিন কাজ।
সুতরাং আয় বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকতে হবে।
রিজার্ভ বড় হওয়ায় উদযাপন করতে পারি, তবে তাতে আরাম করে বসা যাবে না—এটি মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনার একটি চ্যালেঞ্জও বটে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited