ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী প্রতীকের তালিকা হালনাগাদ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আগের তালিকার কিছু প্রতীক বাদ দিয়ে এবং কয়েকটি নতুন প্রতীক যুক্ত করে কমিশন মোট ১১৯টি প্রতীকের গেজেট প্রকাশ করেছে। নতুন যুক্ত প্রতীকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘শাপলা কলি’, যা ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছে।
নতুন গেজেটে প্রতীকের সংখ্যা বেড়ে ১১৯
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত গেজেটে এ তথ্য জানানো হয়।
গেজেটটি ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮’-এর অধিকতর সংশোধনের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।
গেজেটে বলা হয়েছে,
“‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২’-এর আর্টিকেল ৯৪-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮’-এর বিধি ৯-এর উপ-বিধি (১) প্রতিস্থাপন করেছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী স্থগিত প্রতীক ছাড়া উল্লিখিত তালিকার যেকোনো একটি প্রতীক পেতে পারেন, প্রাপ্যতা সাপেক্ষে।”
ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১১৫টি প্রতীক তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।
নতুন সংশোধনে কয়েকটি প্রতীক বাদ ও নতুন কয়েকটি যুক্ত হওয়ায় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১১৯-এ।
‘শাপলা কলি’সহ নতুন প্রতীক যোগ
ইসি কর্মকর্তাদের মতে, ‘শাপলা কলি’সহ বেশ কিছু নতুন প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে নিবন্ধিত নতুন দল কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক সংকটে পড়তে না হয়।
এক কর্মকর্তা বলেন,
“প্রতীক নির্বাচনী প্রতিযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অনেক সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতীক সংকটে পড়েন। নতুন প্রতীকগুলো সেই সংকট নিরসনে সহায়ক হবে।”
গেজেটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রার্থীদের আবেদন ও প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে কমিশনের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ থাকবে, যাতে প্রতীক বরাদ্দে স্বচ্ছতা ও তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
স্থগিত রইল ‘নৌকা’ প্রতীক
গেজেট অনুযায়ী, জনপ্রিয় ও ঐতিহাসিক ‘নৌকা’ প্রতীকটি বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতীকের ব্যবহার ও মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই আপাতত এটি বরাদ্দ দেওয়া হবে না।
একজন কমিশন কর্মকর্তা বলেন,
“নৌকা প্রতীকের বিষয়ে আইনগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন হলে কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”
প্রতীক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও আধুনিকতা আনার উদ্যোগ
ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, প্রতীক ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক, বৈচিত্র্যময় ও প্রতিযোগিতামূলক করতেই এই সংশোধন আনা হয়েছে।
প্রতীক শুধু দলীয় পরিচয়ের চিহ্ন নয়, বরং গ্রামীণ ও অশিক্ষিত ভোটারদের কাছে প্রার্থীর পরিচয়ের মাধ্যম—এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই প্রতীক তালিকা পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন,
“নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রতীকের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে আমরা তালিকাটি হালনাগাদ করেছি।”
তিনি আরও জানান, নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীকের চাহিদা ও সমতা বজায় রাখতে এই সংশোধন ভবিষ্যতে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়ক হবে।
গেজেট প্রকাশের পর অনলাইনেও তালিকা উন্মুক্ত
গেজেট প্রকাশের পরপরই ইসি তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে হালনাগাদ প্রতীকের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে।
এর ফলে রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং সাধারণ ভোটাররা অনলাইনে সহজেই প্রতীকগুলোর চিত্র, নাম ও নম্বর দেখতে পারবেন।
এছাড়া কমিশন জানিয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মধ্যে প্রতীকভিত্তিক সচেতনতা তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু হলে প্রার্থীরা এই প্রতীক ব্যবহার করে পোস্টার, লিফলেট ও অন্যান্য প্রচারণা চালাতে পারবেন।
বৈচিত্র্য ও স্বচ্ছতার বার্তা
বিশ্লেষকদের মতে, ইসির এই উদ্যোগ আসন্ন নির্বাচনে বৈচিত্র্যময় প্রতিযোগিতা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
একদিকে নতুন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিকল্প প্রতীক পাবেন, অন্যদিকে ভোটাররা আরও পরিচিত ও অর্থবহ প্রতীকের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রতীক ব্যবস্থার এই সংস্কার নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক করার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited