শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। তিনি বলেছেন, “এখন থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে, না হলে পরীক্ষায় পাস করা যাবে না।”
আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)-এ অনুষ্ঠিত ‘এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫-এর ফলাফল বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ফলাফল বিশ্লেষণ ও বাস্তবতা
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “শোনা যাচ্ছে, এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর লাইব্রেরিতে স্টেশনারি ও শিক্ষা উপকরণের বিক্রি বেড়েছে। যদিও এর কোনো প্রমাণ নেই, কিন্তু বিষয়টি বাস্তবসম্মত। ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা এখন টের পাচ্ছে—শুধু পরীক্ষায় অংশ নিলেই আর পাস করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “গত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল আমাদের শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। কারণ এতদিন শিক্ষার্থীরা ধরে নিয়েছিল, যেভাবেই হোক পরীক্ষায় অংশ নিলেই পাস করা যাবে। কিন্তু এখন সেই দিন শেষ। যারা নিয়মিত অধ্যয়ন করবে না, তারা আর পাসের তালিকায় থাকবে না।”
“পড়াশোনার বিকল্প নেই”
অধ্যাপক আবরার জানান, “এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনই আমরা বলেছিলাম, ফলাফল বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একটি বৈঠক করব। আজ সেই বৈঠক আয়োজন করা হলো।”
সভা সফলভাবে আয়োজনের জন্য তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষ শিক্ষাবিদরা
সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভিন। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আবেদ চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইয়ার বিভাগের অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নয়জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), নয়টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, এবং এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ও খারাপ ফলাফল করা ১৮টি করে স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারাও সভায় অংশ নেন।
শিক্ষকরা বললেন: অনুপস্থিতি ও অলসতা ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে
সভায় অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষক জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ না করায় ও পাঠে আগ্রহ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ভালো ফল করতে পারেনি।
অন্যদিকে যেসব স্কুল ভালো ফলাফল করেছে, তাদের শিক্ষকরা জানান, নিয়মিত ক্লাস নেওয়া, পাঠের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং অভিভাবকদের নিয়মিত তত্ত্বাবধানের ফলেই শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে।
একজন শিক্ষক বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল—পরীক্ষায় অংশ নিলেই পাস নিশ্চিত। এই মনোভাব নিয়ে অনেকেই পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। যারা পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল না, তারা ব্যর্থ হয়েছে।”
শিক্ষা উপদেষ্টার কঠোর অবস্থান
অধ্যাপক রফিকুল আবরার বলেন, “আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি, যেখানে কঠোর বাস্তবতা শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে। শুধু পরীক্ষায় নাম লেখালে হবে না—জ্ঞান অর্জন ও বোঝাপড়ার দক্ষতা যাচাইয়ের মাধ্যমেই পাস নির্ধারিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অনেকেই হতাশ হয়েছেন, কিন্তু এটি একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। এই ফলাফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুনভাবে ভাবতে ও শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের প্রতি উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সভায় উপস্থিত শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা জানান, আগামী বছর থেকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বোধগম্যতা ও বিশ্লেষণভিত্তিক প্রশ্নের সংখ্যা বাড়ানো হবে, যাতে মুখস্থ নির্ভরতা কমে এবং শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি বিকাশ পায়।
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব রেহানা পারভিন বলেন, “আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চাই যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হবে। ফলাফল শুধু সংখ্যা নয়, তা শিক্ষার মানের প্রতিফলন।”










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited