দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করে আরও উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে এটি দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সাগর অতি উত্তাল হয়ে উঠেছে এবং এর গতিপথ ও তীব্রতা বিবেচনায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফূল নেওয়াজ কাবির স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বুলেটিনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান অবস্থান
বিশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, সোমবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার বন্দর থেকে ১,২৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা বন্দর থেকে ১,২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে প্রায় ১,১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরও উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ঘনীভূত হতে পারে। বর্তমান গতিপথে অগ্রসর হলে এটি আগামীকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা বা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
বাতাসের গতি ও সাগরের অবস্থা
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর অতি উত্তাল অবস্থায় রয়েছে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামী দুই দিন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর, আন্দামান সাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় উচ্চ তরঙ্গ সৃষ্টি হতে পারে। এই সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথে থাকা সমুদ্রের পানিস্তর স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
চার সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রযাত্রা ও তীব্রতা বিবেচনায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এটি বোঝায়—ঘূর্ণিঝড়টি এখনো বাংলাদেশের উপকূলে সরাসরি হুমকি নয়, তবে সমুদ্রবন্দরগুলো সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
এছাড়া, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে না যেতে এবং সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশনা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উপকূলজুড়ে সতর্কতা, জারি স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা প্রশাসনগুলোও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আবহাওয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী নির্দেশনা জারি করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টি যদি দিক পরিবর্তন করে উত্তর-পূর্বমুখী হয়, তবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের ওপর এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র।
উপকূলবাসীর জন্য পরামর্শ
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে সতর্ক থাকা জরুরি। ঘূর্ণিঝড় মোন্থা শক্তিশালী আকার ধারণ করলে এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলে বৃষ্টিপাত, দমকা হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তাই উপকূলীয় জনগণকে আবহাওয়া অফিসের পরবর্তী ঘোষণা ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা নিয়মিত অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।







সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited