বাংলাদেশ ও পাকিস্তান তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) নবম সভায় দুই দেশই অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে আজ সোমবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন অর্থ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম বিভাগ) মন্ত্রণালয়ের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে উভয় দেশ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি, গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষা, ব্যাংকিং, পর্যটন, খেলাধুলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে।
দুই দেশের প্রতিনিধিরা জানান, পারস্পরিক যোগাযোগ ও সংযোগ বাড়াতে সরাসরি বিমান ও সমুদ্রপথে নৌযান চলাচল পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধির পথ সুগম হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জেইসি সভার প্রায় ২০ বছর পর এই নবম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ায় এটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। এ সভা দুই দেশের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
উভয় পক্ষই বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও গভীর করতে নতুন কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নে সম্মত হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শিল্পখাতে যৌথ বিনিয়োগ, গার্মেন্টস ও ওষুধ শিল্পে প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জ্বালানি খাতে যৌথ উদ্যোগ, বিশেষ করে গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বহুমাত্রিক বিকাশের পথে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়লে আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে এই আলোচনা তাই সময়োপযোগী ও ভবিষ্যতধর্মী।”
পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, “দুই দেশের সম্পর্ক অতীতের ভুল বোঝাবুঝি পেছনে ফেলে নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।”
বৈঠকে উভয় দেশ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও একযোগে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়। পরিবেশ পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রযুক্তি ও গবেষণা বিনিময়েও জোর দেওয়া হয়।
সভা শেষে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পাকিস্তান হালাল অথরিটির (পিএইচএ) মধ্যে হালাল বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাকসূরা নূর এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষে ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনার ইমরান হায়দার এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে হালাল সার্টিফিকেশন, মাননিয়ন্ত্রণ ও পণ্যের গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগের পথ খুলে গেল বলে জানায় ইআরডি।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, ভবিষ্যতে উভয় দেশের মধ্যে শিল্প, পর্যটন, কৃষি, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি বিনিময় কর্মসূচি চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, পরবর্তী ১০ম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সভা ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে—এ বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে।
সভার শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সংযোগ আরও জোরদার করবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক কল্যাণ ও আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited